কলেরা, প্লেগ, হাম, প্লেগ অব মার্সেই আরো অন্যান্য মহামারি রোগ
১৮১৭ সালে পানি বাহিত জীবাণুর কারণে রাশিয়ায় প্রথম কলেরা মহামারি দেখা দেয়। এতে রাশিয়ায় এক মিলিয়ন মানুষ মারা যায়।
রাশিয়া থেকে ব্রিটিশ সৈন্যরা কলেরার জীবাণু বহন করে ভারতে আসে। ভারতে কলেরার বিস্তার ঘটতে থাকে এবং লক্ষ লক্ষ লোক মারা যেতে থাকে।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে ভারত থেকে কলেরা সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে, স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায়।
১৮৮৫ সালে কলেরার টিকা আবিষ্কার হলেও ইহা নিয়ন্ত্রণে আসতে আরো বহু
সময় লাগে।
১৮৫৫ সালে চীনে প্লেগ হয় এবং তা হংকং, তাইওয়ান, ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেড় কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী রানী ভিক্টোরি- য়ার উপহার নিয়ে ফিজি থেকে অস্ট্রেলিয়া যায়। তখন অস্ট্রেলিয়ায় হামের প্রাদুর্ভাব চলছে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে রাজকীয় বাহিনী ফিজি দ্বীপে প্রত্যাবর্তন করলে সমগ্র ফিজিতে হাম ছড়িয়ে পড়ে। এতে ফিজির এক তৃতীয়াংশ (৪০০০০) মানুষ মারা যায়। ১৮৮৯ সালে প্রথম ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে সাইবেরিয়া ও কাজাখস্তানে।
সেখান থেকে মস্কো, মস্কো থেকে ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ড, তারপর ইউরোপে। ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৯০ সালে ইহা শেষ হয়, তবে তা ৩৬০০০ লোকের প্রাণ কেড়ে নেয়।
প্লেগ অব মার্সেইঃ
এই মহামারিতে লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে । ১৯১৮ সালে যখন প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে, সে মুহূর্তে দেখা দেয় আরেক দুর্যোগ-মহামারি স্প্যানিশ ফ্লু । ফ্লুটির উৎপত্তি স্পেনে নয়। অথচ ইহা স্প্যানিশ ফ্লু নামে অভিহিত। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্পেন ছিল নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
তাদের সংবাদ পত্রের উপর সেনসর ছিল না। স্পেনের রাজ পরিবার ফ্লুতে আক্রান্ত হলে স্পেনের সংবাদ পত্রগুলো ফলাও করে তা প্রচার করে। ফলে এর নাম হয়ে যায় স্প্যানিশ ফ্লু। এর উৎপত্তি স্থল নিয়ে বিতর্ক আছে।
কারো মতে চীন, কারো মতে যুক্ত রাজ্য, কারো মতে যুক্ত রাষ্ট্র এর উৎপত্তি স্থল। সৈনিকদের মাধ্যমে ইহা ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২০ সালের এপ্রিলে ইহা শেষ হয়। এতে ৫ কোটি মানুষ মারা যায়।
বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশ গুলো এ বিষয়ে তেমন মনোযোগ দিতে পারেনি। আবার যুদ্ধের কারণে দেশ গুলো এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত, তারপরে আরেকটি মহামারি প্রচার করে আতঙ্ক ছড়াতে চায়নি। সতর্কতা ও প্রতিষেধক ঔষধের অভাবে এর ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ছিল ভয়াবহ।
১৯৫৭ সালে হংকং থেকে যে ফ্লু শুরু হয় তার নাম এশিয়ান ফ্লু। ইহা চীন, ইংল্যান্ড, যুক্ত রাষ্ট্রসহ নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রাদুর্ভাব ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত থাকে। এতে ১১ লক্ষ লোকের প্রাণ যায়।
টিকা আবিষ্কার হলে মানুষ নিস্তার পায়। ১৯৮১ সালে ধরা পড়ে এইডস রোগ। আমেরিকার সম কামীদের মধ্যে প্রথম এ রোগ চিহ্নিত হয়। ধারণা করা হয় ১৯২০ এর দশকে পশ্চিম আফ্রিকার শিম্পাঞ্জির ভাইরাস থেকে এইডসের উৎপত্তি হয়।
আফ্রিকা এখনো এইডসের ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইহা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিনষ্ট করে দেয়। এইডসের প্রতি বিধান আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চলছে।
এ রোগে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি মানুষ মারা গেছে।
২০০৩ সালে সার্স, ২০০৯-২০১০ সালে সোয়াইন ফ্লু, ২০১৪-২০১৬ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং বেশ কিছু মানুষ মারা যায়।
এরপরে আসে কোভিড-১৯ নামে মহাদুর্যোগ সৃষ্টিকারী করোনা মহামারি। এর উৎপত্তি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে। করোনার কারণে বিশ্বে এ পর্যন্ত ৪০ লক্ষ লোক মারা গেছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ