কিশোরীদের হরমোন জনিত সমস্যা

কিশোরী-দের হরমোন জনিত নানা সমস্যা হয়ে থাকে।

এর মধ্যে পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোম একটি বহুল পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা।

যেটি কিশোরী থেকে মধ্য বয়সী নারীদের হয়ে থাকে।

এ ধরণের সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে অনেকে লজ্জায় পড়ে যান।

এতে বড় ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

কিশোরী-দের হরমোন-জনিত সমস্যার ধরন ও প্রতিকার,

নিয়ে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. শাহজাদা সেলিম।  

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব-বিদ্যা-লয়ের,

এন্ডো-ক্রাই-নোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ।

পলিসি-স্টিক ওভারি প্রধানতঃ বালিকা ও নারীদের প্রজনন-ক্ষম,

সময়ে হয়ে থাকে (১৫-৪৪ বছর) সংখ্যার কিছুটা তারতম্য হলেও,

১৫ বছর থেকে বয়স ৪৪ বছরের দিকে যত আগাতে থাকে,

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের রোগীর সংখ্যা, তত বৃদ্ধি পেতে থাকে (২.২%-২৬.৭%)। 

পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের,

রোগীর সংখ্যা আলাদা আলাদা রকম এবং এ সংখ্যা,

রোগ শনাক্ত-করণের ক্রাইটে-রিয়ার কারণেও আলাদা হতে পারে।

ইউরোপের দেশ গুলোর প্রজনন-ক্ষম মহিলাদের,

১৫-২০ শতাংশ এ সমস্যায় আক্রান্ত।
আমেরিকার দেশ গুলোতে,

এর সংখ্যা ২০ শতাংশের কাছা কাছি। এশিয়ার দেশ গুলোতে,

এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হয়।

তবে বাংলাদেশে এ হার ২৫ শতাংশের কাছা কাছি হবে বলে ধরে নেওয়া হয়।

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোম মূলতঃ নারী দেহে,

এন্ড্রো-জেন (পুরুষ যৌন হরমোন)-এর আধিক্যের কারণে,

সংঘটিত শারীরিক সমস্যা। এ ক্ষেত্রে নারী দেহে,

এন্ড্রো-জেন হরমোনের প্রভাবে বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। 

যেমন-

ক) অনিয়মিত মাসিক,

খ) অতিরিক্ত রক্তস্রাব,

গ) মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরুষালি),

ঘ) ব্রণ মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে। আরও,

কিছু শারীরিক সমস্যা-এর সঙ্গে থাকতে পারে- তল পেটে ব্যথা,

মক-মলের-মতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়) বন্ধ্যত্ব। 

এ রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

এদের অনেকেই দৈহিক স্থূলতায় আক্রান্ত হয়,

নাক ডাকা ও ঘুমের সময় হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হওয়া,

হৃদ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্য-হীনতা ও

জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
পলিসি-স্টিক,

ওভারি সিন্ড্রোম একটি জীন গত ত্রুটি ও পরিবেশ গত,

ত্রুটির সমন্বিত ফল। জীনগত ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া,

খুব কম শারীরিক শ্রম সম্পাদন করা ও ঝুঁকি পূর্ণ,

খাদ্য গ্রহণ করা ইত্যাদি এ রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোম দেখা দেয় যখন,

ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টো-স্টেরন হরমোন তৈরি করতে উদ্দীপ্ত হয়।

যার পিছনে পিটুই-টারি গ্রন্থি কর্তৃক অতি- রিক্ত,

এলএইচ (LH) নিঃস্বরণ ও দেহে ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রে-ন্সের উপস্থিতি।

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নাম হওয়ার প্রধান কারণটি হলো,

এ রোগিনীদের ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন বয়সি, বিভিন্ন আকারের,

বিভিন্ন সংখ্যার সিস্ট থাকতে পারে। 
কিন্তু এটি পরিষ্কার ভাবে একটি,

হরমোন জনিত সমস্যা। অধিকাংশ রোগীর দেহে,

ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রেন্স থাকে এবং তারা স্থূলকায় হয়।

লক্ষণ-

১। অনিয়মিত মাসিকঃ

বেশিরভাগ মেয়েদের ৪০ বা ৪৫ বা ৫০ দিন বা কারও কারও ক্ষেত্রে,

আরও বেশি দিন পর ঋতুস্রাব হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে,

অল্প মাত্রায় ঋতু স্রাব হতে পারে, কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঋতু স্রাব হয়।

মাসের পর মাস ঋতু স্রাব বন্ধ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। 

বয়ঃসন্ধি-কালের শুরুতেই এ সমস্যা শুরু হতে পারে,

প্রজনন-ক্ষম সময়ে অন্য যে কোনো সময়েও এ সমস্যা শুরু হতে পারে।

২। বন্ধ্যত্বঃ যত জন নারী সন্তান নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের একটা বড় অংশই,

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের কারণে হয়। আর,

এ বন্ধ্যত্বের কারণ হলো- ঋতু চক্রের অনেক গুলোতেই ডিম্বানুর অনুপস্থিতি।

৩। পুরুষালি হরমোনের অধিক মাত্রায় উপস্থিতিও এর বহিঃ প্রকাশ।

এর ফল স্বরূপ নারী দেহে পুরুষদের মতো লোম দেখা দিতে পারে (হার্সো-টিজম),

মুখে বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় ব্রণ হওয়া, পুরু-ষালি-টাক ইত্যাদি।

প্রতি চার জন পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের,

নারীর তিন জনের দেহে এ লক্ষণ গুলো থাকে।

৪। মেটা-বলিক সিন্ড্রোমঃ

এতে পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীর দেহে,

ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রে-ন্সের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে,

ক্রমশ দৈহিক ওজন বৃদ্ধি হওয়া, ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া, দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা,

ঘাড়ের পিছনে বা বগলে নরম কালো ত্বকের উপস্থিতি, রক্তের গ্লুকোজ,

কিছুটা বেড়ে যাওয়া, কলেস্টেরল অস্বাভাবিক থাকা ইত্যাদি।

রোগ শনাক্ত করণঃ

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোম শনাক্ত করতে সচরা-চর,

নিম্ন লিখিত ক্রাইটে-রিয়ার যে কোনো দুটির উপস্থিতি আবশ্যক-

  • নারী দেহে অতি-রিক্ত এন্ড্রো-জেন হরমোন উপস্থিতির প্রমাণ।
  • অনিয়-মিত ঋতু-স্রাব।
  • ডিম্বা-শয়ে-সিস্ট।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

  • সিরাম টেস্টো-স্টেরন, এলিস, এফএসএইচ।
  • পেটের আল্ট্রা-সনো-গ্রাম।
  • ওজিটিটি।

চিকিৎসাঃ

জীবন-যাত্রা ব্যবস্থাপনাঃ

চিকিৎসার শুরুতেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্ব পূর্ণ ভাবে নজর দিতে হবে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা রোগিনীর দৈহিক ওজন কাংক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে,

বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাবে যাতে করে,

ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রেন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

আদর্শ জীবন-যাপন ব্যবস্থাপনা রোগিনীর হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রো-মের খাদ্য তালিকায় শর্করার আধিক্য কম থাকবে,

শাক সবজি (আলু বাদে), রঙিন ফল মূল ও আমিষ জাতীয় খাদ্য প্রাধান্য পাবে।

দৈহিক ওজন বিবেচনায় রেখে শারীরিক শ্রমের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঔষধঃ

  • নারীদের জন্ম নিয়ন্ত্রের জন্য ব্যবহৃত পিল গুলো,

যাতে স্বল্প মাত্রায় ইস্ট্রো-জেন ও প্রজেস্ট্রেরন থাকে, তা খুব সহায়ক ঔষধ।

-মেট-ফর-মিন

  • অবাঞ্ছিত লোম দূর করবার ক্রিম
  • প্রজনন সম্ভাবনা বৃদ্ধির ঔষধ

পলিসি-স্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই,

এ সমস্যার শারীরিক লক্ষণ গুলোকে খুব দ্রুত বুঝতে পারেন না।

কেউ কেউ লক্ষণ গুলো বুঝতে পারলেও সংকোচ বোধের কারণে,

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করেন। যেহেতু রোগটির ব্যাপকতা ও সুদূর প্রসারী,

স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, তাই প্রজনন-ক্ষম বয়সের সব নারীকে তার,

এ সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *