গ্যাসের সমস্যা
গ্যাসের সমস্যাঃ
গ্যাসের সমস্যায় আমরা কম বেশি সকলেই ভুগি। কিছু না খেয়ে বেশিক্ষণ থাকলেই গ্যাস হয়ে যায় আমাদের পেটে। তার থেকে শুরু হয় বুকে পেটে ব্যথা, মাথা ধরা, বমি ভাব ইত্যাদি। অনেকের আবার গ্যাসের সমস্যা থেকে গ্যাস্টিকও হয়ে যেতে পারে। বেশি তেল জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে কখনও গ্যাস হয়ে যেতে পারে। তাই যারা গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তারা কোনও মশলাদার খাবার খাওয়ার আগে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে তবেই খাবার খান। তবে সব সময় গ্যাসের ওষুধ খেয়ে খাবার খেলে কয়েক বছর বাদে আর কোনও ওষুধই শরীরে গিয়ে কাজ করতে পারে না। তাই ওষুধ খেয়ে গ্যাস ঠিক না করে প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাসের সমস্যা দূর করে নেওয়াটাই সব থেকে ভালো।
আদাঃ
গ্যাস-অম্লের জন্য আদা খুবই উপকারি। ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ গ্যাসট্রোএনটেরেলজি এন্ড হেপ্যাটোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে একটি তথ্য যে, আদা খাওয়ার ফলে হজম খুব তাড়াতাড়ি হয়। পেট যদি খুব তড়াতাড়ি খালি হয়ে যায়। তাহলে সেই খালি পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মশলাদার অথবা ভারী কোনও খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এক কুঁচি আদা খেয়ে নিলে আর কোনও সমস্যাই থাকবে না।
রসুনঃ
গ্যাসের জন্য রসুন খুবই উপকারি। রসুন শুধুমাত্রই খাবারে স্বাদ আনে না। এছাড়া প্রচুর পরিমানে এতে ফাইবার থাকে যা হজম করতে সাহায্য করে।
জিরাঃ
খাবারে অল্প একটু জিরে গুঁড়ো দিলে যে কোনও খাবারের স্বাদ পরিবর্তনের সঙ্গে ভালো হয়ে যাবে গ্যাসের সমস্যাও।
তুলসী পাতাঃ
এক গ্লাস জলে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর করা যায়।
মেনথলঃ
গ্যাসের সমস্যা মেনথল খুব তাড়াতাড়ি দূর করতে পারে। মেনথল মিশিয়ে চায়ের সঙ্গে খেলে গ্যাসের পাশাপশি হজম হয় খুব সহজে এবং শরীর বেশ সতেজ লাগে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় করণীয়ঃ
খাওয়ার আগে বা পরে অনেকেরই বুক জ্বালাপোড়া করে বা পেট ব্যথা করে। আবার অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলে , পেট ব্যথা করে খাওয়ার পর পর বমি বমি লাগে বা পেটে শব্দ করে অনেকের। এছাড়াও খাবারে ভেজাল এর কারণে ছোট-বড় সব বয়সেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি মূলত পরিপাকতন্ত্রের ব্যাঘাতজনিত একটি উপসর্গ। আমাদের দেশের মানুষ বেশি মসলাযুক্ত খাবার পছন্দ করেন। বেশি মসলাযুক্ত খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়।
ধূমপান করলে হজম শক্তি কমে যায়, ফলে দেখা দিতে পারে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
অনেক সময় ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করার ফলে হতে পারে এই সমস্যা।
সকালে খালি পেটে চা বা কফি অথবা অ্যাসিড জাতীয় ফল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা। ডায়াবেটিস রোগী, যাদের হজম শক্তি কম, তারা ভারী খাবার গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
আবার পরিমাণের তুলনায় কম পানি গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত হলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় এর ফলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। লিভার ফাংশনের কোনও রকম গোলযোগ দেখা দিলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
এছাড়া মানসিক অশান্তি ও টেনশন থেকেও গ্যাস্ট্রিক দেখা দেয়।
প্রতিকারঃ
১.নিয়মমাফিক জীবনযাপন করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় হাঁটাচলা করুন ও ব্যায়াম করুন। এতে পেটে গ্যাস জমবে না।
২. দই অথবা টক দই গ্রহণ করুন। এতে আছে প্রোবায়োটিক উপাদান যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ও গ্যাস কমিয়ে রাখে।
৩.বিভিন্ন খাদ্য উপাদান যেমন শসা, আদা, লবঙ্গ ইত্যাদি খেলে পেটে গ্যাস তৈরি হয় না।
৪. ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
৫.নির্দিষ্ট সময় পর পর অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করুন ও পানি পান করুন।
৬. তেল, চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। তবে গ্যাসের সমস্যা হবে না।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
৮. নিজেকে প্রফুল্ল ও হাসিখুশি রাখুন।
গ্যাসট্রিকের রোগীদের বেশি তেল মশলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন না খেয়ে, বেশি জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে, কিছু সবজি আছে সেগুলো গ্যাসট্রিকের সমস্যা যাদের আছে তাঁদের খুব বেশি না-খাওয়াই ভালো। বা কোন দিনও যদি বুঝতে পারেন আপনার হজমের সমস্যা আছে, তাহলে এই সবজি ভুলেও খাবেন না। তাহলেই আসবে বিপদ।
সকালে অনেকেই খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ছোলায় প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকে ভুগছেন, তাদের খুব বেশি ছোলা না খাওয়াই ভালো। একইসঙ্গে যারা কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তারাও ছোলা খাওয়া এড়িয়ে যান।
মুখি কচুর তরকারি খেতে পছন্দ করেন অনেকে। যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে, তাঁদের মুখি কচুর তরকারি না খাওয়াই ভালো। এতেও পেটের সমস্যার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়।
গরমের সময় এঁচোড় (কাঁচা কাঁটাল)আনা হয় প্রায় সব বাড়িতেই। খেতে সুস্বাদু হওয়ার কারণে একে গাছপাঁঠা নামেও ডাকা হয়ে থাকে। তবে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই সবজি গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য একেবারেই ভালো নয়।
রাজমা (ফরাসের বিজ) চাওল বা রাজমা দিয়ে পরোটা, রুটি আজকাল বেশিরভাগ বাঙালি বাড়িতেই রাঁধা হয়। পঞ্জাবি এই খাবারটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনই পুষ্টিকর। এতেও প্রোটিনের মাত্রা ছোলার মতোই পাবেন। কিন্তু গ্যাসের সমস্যায় ভুগলে এড়িয়ে যাবেন এটি।
গরমে পাওয়া না গেলেও, শীতের সবজি মুলাও কিন্তু বেশ ভয়ানক গ্যাসট্রিকের রোগীদের জন্য। এটি গ্যাসের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া-সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয় মুলা খেলে।