চেয়ারে বসে কোন ব্যায়ামগুলো করলে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে

ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী।

এর ফলে শরীরের বাড়তি মেদ কাটে, কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে, শারীরিক সক্ষমতা ও শক্তি বাড়ে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মন প্রফুল্ল থাকে।

সাধারণতঃ যারা ঘর হতে বেরোতে বেশি সময় পাননা বা জিমে যাওয়ার সুযোগ পাননা তারা ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন।

ব্যায়াম করলেই রোগ হতে দূরে থাকার একটা প্রিমিয়াম টিকেট পাওয়া যায়। ঘরে বসে যেসব ব্যায়াম করা যায় সেগুলোও এই টিকেটটা পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশেই ঘরে করার সবচেয়ে উপযোগী ব্যায়াম হলো যোগ ব্যায়াম বা Yoga.

বিভিন্ন ধরনের যোগ ব্যায়ামগুলো করার মাধ্যমে আপনি শারীরিক নমনীয়তা অর্জন করতে পারেন।

হাড়ের বা মাংসপেশীর ব্যথা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন। এসব ইয়োগা আপনার দেহ ও মন দুটোকেই প্রফুল্ল রাখবে।

ইন্টারনেট হতে বিভিন্ন ভিডিও দেখে আপনি আপনার উপযোগী ইয়োগা গুলো বেছে নিতে পারেন।

আরো কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেমন – ট্রেডমিলে দৌঁড়ানো, এক্সারসাইজ বাইক চালানো।

এগুলো শরীরের চর্বি কাটবেও রক্তে চর্বির পরিমাণ কমায়।

আর বিশেষ করে শরীরের হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টের সমস্যার ঝুঁকি হতে দূরে থাকা যায়।

চর্বি কাটায় উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখের ঝুঁকি থেকেও দূরে থাকা যায়।

ঘরে বসে সুস্থ থাকার ব্যায়ামের আরেকটা উপায় রয়েছে মুসলিমদের নামাজ পড়ার মধ্যে।

প্রতিদিন পাঁচ বার –

(০১) ফজরঃ ফজরের নামাজের সময় সুবহে সাদিক হতে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত।

(০২) যোহরঃ জোহরের নামাজের সময়
সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার পর হতে শুরু করে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন জিনিসের ছায়া সেই জিনিসের সমান না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ।

(০৩) আছরঃ জোহরের সময় শেষ হলেই আসরের সময় শুরু হয়।

কোনো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ/ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আসরের নামাজের সময় শুরু হয়।

আর তা সূর্য ডোবার বা অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত আসরের নামাজের সময় থাকে।

(০৪) মাগরিবঃ আসরের সময় শেষ হওয়া তথা সূর্য ডুবার পর হতে মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হয়।

এবং পশ্চিমাকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত বিদ্যমান থাকে।

(০৫) এশাঃ মাগরিবের সময় শেষের সাথে সাথেই (অর্থাৎ আকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে) এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত তা বিদ্যমান থাকে।

এই পাঁচ সময়ে নামাজ পড়তে হয়। আগে ভাবা হতো যে নামাজ পড়াটা শুধু আল্লাহর কাছে দৈনিক পাঁচবার হাজিরা দেওয়া।

কিন্তু ২০১৮ সালে জাপানে একদল গবেষকের গবেষণার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে । যাঁরা দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়েন।

তাঁরা কোমর, হাঁটু এসব সন্ধিস্থলের রোগ হতে ঝুঁকিমুক্ত থাকেন।

কারণ নামাজ পড়ার সময় রুকু করতে গিয়ে সামনে ঝুঁকতে হয়।

সিজদা করার সময়ও একটু কসরত করতে হয়। এজন্য নামাজ পড়াও এক ধরনের ব্যায়াম।

অফিসের চেয়ারে বসেই ব্যায়াম করলে , দূরে থাকবে পিঠ এবং কোমরের ব্যথা।

জীবন যত আধুনিক হচ্ছে, ততই যেন চেয়ার-টেবিলে স্থবির হচ্ছি আমরা।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রজন্ম এতটাই শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে।

দেহের নড়াচড়া বা ব্যায়ামের গুরুত্ব প্রচণ্ডভাবে উপলব্ধি হচ্ছে।

অফিস-আদালতেও দিনের কর্মঘণ্টাগুলো প্রায়ই একটানা বসে কাটাতে হয়।

এতে পিঠে ব্যথা, মুটিয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

জীবনে গতি এলেও কেমন যেন স্থবিরতা এসেছে মানুষের মাঝে।

অনেক কাজই করা হচ্ছে, কিন্তু তার বেশির ভাগটাই চেয়ার-টেবিল কিংবা বিছানায় বসে।

কাজ ফেলে তো আর ব্যায়াম সম্ভব না। তাই এক্সপার্টরা ডেস্ক এক্সারসাইজে বেশ জোর দিচ্ছেন।

যেখানে সারা দিন বসে কাজ করছেন, সেখানেই অতি জরুরি কিছু শারীরিক কসরত সেরে নিতে পারবেন।

এতে শরীরটা ঝরঝরে থাকবে। চেয়ার টেবিলে বসেই করা যায় এমন সহজ ব্যায়াম শেখাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। 

ঘাড়ের ব্যায়াম  অফিসের চেয়ার ও টেবিলের উচ্চতা, আপনার উচ্চতা এবং টেবিলে স্ক্রিনের অবস্থানের কারণে ঘাড়ে বড় ধরনের চাপ নিতে হয়।

বুঝে ওঠার আগেই ঘাড়ে ব্যথা বা জড়তা চলে আসতে পারে। এ নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে পারেন ।

এ জন্য যা করতে পারেন- 

১. সাইড-টু-সাইডঃ

আরাম করে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। বায়ে তাকাতে ঘাড়টা বাঁয়ে ঘোরান, একটানা পাঁচ সেকেন্ড এভাবেই থাকুন।

খেয়াল রাখবেন, এভাবে তাকানোর সময় আপনার দৃষ্টি যেন কাঁধের সমান্তরালে থাকে। ওপর বা নিচের দিকে তাকাবেন না, সোজা তাকাবেন।

এবার বাঁ থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে একইভাবে তাকান। দুদিকে পাঁচবার করে মোট দশবার করুন। 

২. আপ অ্যান্ড ডাউনঃ

আপ অ্যান্ড ডাউন অনেকটা দোলকের নড়াচড়ার ভঙ্গির মতো।

ওপরের দিকে তাকাতে হবে পাঁচ সেকেন্ডের জন্য, এরপর একইভাবে নিচের দিকেও তাকাতে হবে । 

৩. রোটেশন স্ট্রেচঃ

ঘাড়টাকে সামান্য নিচের দিকে নিয়ে মেঝের দিকে তাকান। এবার ঘাড়টাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরাতে থাকুন।

ধীরে ধীরে এমনভাবে ঘোরাবেন যেন খুব ভালো একটা স্ট্রেচ হয়।

ঘড়ির কাঁটার দিকে পাঁচবার এবং একইভাবে বিপরীতে পাঁচবার করুন। দেখবেন, ঘাড়ের সব জড়তা চলে গেছে।

যদি এমনটা করতে গিয়ে বিশেষ কোনো স্থানে ব্যথা অনুভূত হয় কিংবা পেশিতে টান লাগছে বলে মনে হয়, তবে যেভাবে আরাম পাবেন সেভাবেই ঘোরাবেন।
 
কাঁধ ও হাতের ব্যায়াম  চেয়ারে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর দেহে জড়তা বোধ হতে পারে। তখন বসে থাকাটা কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে।

এ সময় চেয়ারে বসেই একটু ঝরঝরে ভাব আনতে পারেন।  

১. শোল্ডার রোটেশনঃ

যদি চেয়ার থেকে দাঁড়াতে পারেন তবে দুই হাত দুই পাশে ছেড়ে দিন।

যদি বসেই করতে চান তবুও উপায় রয়েছে। দুই হাত বাঁকিয়ে আঙুল দিয়ে কাঁধ স্পর্শ করুন।

এবার দুই হাত সামনের দিকে ঘোরাতে থাকুন, এভাবে কয়েকবার ঘোরান। একইভাবে বিপরীতে ঘোরান কয়েকবার।
 
২. ফিস্ট ক্লিঞ্চঃ

আপনার হাতের আঙুলগুলো কি-বোর্ডে যতটাই জাদু দেখাক না কেন, এদের একটু বিশ্রাম দিন।

আঙুলগুলো মুঠো করে বন্ধ করুন এবং খুলে সটান সোজা করুন। এভাবে কয়েকবার করলে আঙুল ও কবজির ব্যায়াম হবে। 

৩. রিস্ট রোটেশনঃ

মুঠো করে বুড়ো আঙুল অন্যান্য আঙুলের মাঝ বরাবর রাখুন, ঘুষি পাকানোর মতো।

এবার দুই হাতের মুষ্ঠি ঘড়ির কাঁটার দিকে কয়েকবার ঘোরান। এবার একইভাবে বিপরীতে ঘোরান।

দুই হাত একযোগ করতে অসুবিধা হলে প্রয়োজনে একহাত দিয়ে অন্য হাতের কবজির একটু নিচের দিকে শক্ত করে ধরে রাখুন।
 
পায়ের ব্যায়াম কাজের টেবিলে বসেই পায়ের স্বাস্থ্যে নজর দেওয়া সম্ভব।

একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকলে পায়ে জড়তা চলে আসে।

হালকা ব্যায়াম না করলে ধীরে ধীরে পায়ে নানা সমস্যা দেখা দেবে।

যা করবেন-

১. ফোল্ডেড লেগসঃ

একেক ভঙ্গিমায় দাঁড়ানোতে পায়ের একেক ব্যায়াম হতে পারে।

এক পা আরেক পায়ের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে রাখবেন না। ব্যায়ামের জন্য দুই মিনিট সময় নিন।

ইয়োগার ঢংয়ে চেয়ারে দুই পা তুলে বসে থাকুন কিছুক্ষণ। এতে পা দুটি ভালো থাকবে। 

২. ফুট রোটেশনঃ

এটা অনেকটা দুই হাত ঘোরানোর মতোই। এক পা সামনে বাড়িয়ে দিন।

এবার এটাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে কয়েকবার এবং তার বিপরীতে কয়েকবার ঘোরান।
 
কোমর ও পিঠের ব্যায়াম যদি সঠিকভাবেও চেয়ারে বসে থাকেন, তবুও একটা সময় পর পিঠ আর কোমর ধরে আসবে।

এ ক্ষেত্রে যা করতে পারেন- 

১. এক্সটেন্ডেড হ্যান্ডঃ

হাত দুটো মেঝের সঙ্গে সমান্তরাল রেখে পেছনে নিন, আবারও আগের পজিশনে আনুন।

কাজটা দাঁড়িয়ে করলে ভালো। কয়েকবার করলে পিঠের ওপরের অংশ এবং কাঁধের জড়তা একেবারে কেটে যাবে ও আরাম পাবেন। 

২. অ্যাবডোমিনাল স্কুইজঃ

অ্যাবডোমিনাল স্কুইজকে পেট সংকোচন বলা যেতে পারে। শ্বাস জোরালোভাবে টেনে পেট সংকোচন করে ফেলুন।

প্রথমে কাজটা একটু ঝামেলার মনে হবে, তবে হতাশ হবেন না । চর্চা চলতে থাকলে পেটের অস্বস্তি অবস্থা কেটে যাবে।   

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *