দাদ রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও ঔষধ বিস্তারিত। Ringworm symptoms, remedies and medications

দাদ রোগ কি?

দাদ এক ধরনের চর্মরোগ যা Tinea নামক ছত্রাকের আক্রমণ থেকে হয়ে থাকে। এটি একটি প্রচলিত রোগ যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সাধারণতঃ শরীরের এক জায়- গায় গোল চাকতির মত ফুসকুড়ি উঠে চুলকানি হয়। আর একেই দাদ বলে।

শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাদ হতে পারে। তবে ইহা যে কোন বয়সের মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। শরীরের যে কোন স্থানে এর সংক্রমণ ও বংশ বৃদ্ধির ফলে এ রোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া দাদ প্রথমে একটু থেকে পরে বাড়তে থাকে।

দাদ রোগের কারণঃ

ছত্রাকের কারণে দাদ হয়ে থাকে। সাধারণত ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে জায়গা এবং ভালোভাবে আলো বাতাস পায় না এ ধরণের জায়গায় ছত্রাকের জন্ম হয়।

অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা, আটসাট অন্তর্বাস ব্যবহার করলে, অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করলে এবং সংক্রামক ব্যক্তির কাপড়, গামছা ব্যবহার করলে দাদ হতে পারে।

দাদ হলে সাধারণতঃ চামড়ার ওপর গোলাকার ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ইহা দেখতে অনেকটা চাকার মতো যার কিনারগুলো সামান্য উঁচু হয়। যতই দিন যায় চাকার পরিধি বাড়তে থাকে আর কেন্দ্রের দিকে বা ভেতরের দিকে ভালো হয়ে যেতে থাকে। ক্ষত স্থান থেকে খুসকির ন্যায় ওঠে। কখনো কখনো পানি ভর্তি দানা ও পুঁজ ভর্তি দানা হয়। ক্ষত স্থান অত্যন্ত চুলকায় ৷ মাথায় দাদ হলে আক্রান্ত স্থানের চুল পড়ে যায়। কোমরে বা কুচকিতে হলে চামড়া সাদা ও পুরু হয়ে যায়। নখে হলে নখ অস্বচ্ছ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। দাদ চুলকালে সেখান থেকে কষ পড়তে থাকে।

দাদ রোগ কোথায় বেশি হয়ঃ

মাথার চুলের নিচে দেখা যায়।

দাড়িতে দাদ হয়।

কুচকিতে ও রানের দুপাশে দাদ হয়।

পিঠ, পেট, গায়ে দাদ হয়।

পায়ের তলায় এবং পাতায় দাদ হয়।

নখে দাদ হতে পারে।

দাদ রোগের বিস্তারঃ

দাদ খুব সহজেই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমিত হয় । সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত চিরুনি, আধোয়া কাপড় বা ব্যবহৃত অন্য কোন জিনিস থেকে সহজেই এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। প্রাণী বা কীট-পতঙ্গের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে। বিড়াল এ রোগের একটি স্বাভাবিক বাহক। উষ্ণ ও ভেজা স্থানে জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হয়।

দাদ রোগ হলে যা করবেন নাঃ

চিকিৎসার পদ্ধতিগুলি ছাড়াও নিজের জীবন ধারার পরিবর্তন করেও দাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি বজায় রাখলে এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে শরীরের অন্যান্য অংশে অথবা অন্যদের দেহে দাদের সংক্রমণ থেকে এড়ানো যায়।

সংক্রামিত স্থান পরিষ্কার রাখতে বারে বারে ধুয়ে নিন।

এথলেট’স ফুট হলে সংক্রামিত জায়গা শুষ্ক রাখতে মোজা বা জুতো পড়বেন না, কারণ উষ্ণতা এবং আর্দ্রতা ফাঙ্গাসের বৃদ্ধির সহায়ক। খালি পায়ে আর্দ্র ঘরে প্রবেশ করবেন না, যেমন লকার রুম বা জন- সাধারণের স্নান ঘর। এই সব জায়গায় সেন্ডেল পড়ে প্রবেশ করবেন যাতে সংক্র- মণ অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়।

পরিষ্কার এবং শুষ্ক কাপড় (বিশেষতঃ সূতির কাপড়) এবং অন্তর্বাস পডরবেন।

আপনার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস-পত্র অন্যদের ব্যবহার করতে দেবেন না।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং স্বাস্থ্য সম্মত ওজন বজায় রাখুন।

প্রাথমিক অবস্থায় দাদ রোগ হলে যেভাবে প্রতিরোধ করবেনঃ

ক্ষতস্থান শুকনো রাখার চেষ্টা করা, যতটা সম্ভব তেল সাবান না লাগানো ভাল।

সংক্রমণের জায়গাটা যতটা সম্ভব খোলা রাখতে হবে এবং গেঞ্জি, মোজা, আন্ডার- ওয়্যার প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।

উষ্ণ গরম পানি ও এন্ট্রিসেপটিক সাবান দিয়ে ভালভাবে ধৌত করে শুকিয়ে প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার করা উচিৎ।

দাদ রোগের চিকিৎসাঃ

দাদের চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে যেন রোগ আর ছড়াতে না পারে এবং আর কখনও না হতে পারে। প্রভাবিত স্থান এবং তীব্রতার উপরে চিকিৎসা নির্ভর করে। এন্টিফাঙ্গাল ঔষধগুলি ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে এবং রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ে সাহায্য করে।

দাদ রোগের ঔষধঃ

সব ধরনের দাদের ঔষধ একটাই । আর তা হচ্ছে এন্টি ফাংগাল জাতীয় ক্রিম বা ট্যাবলেট। তবে দাদের স্থান ভেদে চিকিৎসার সময় বা ডুরেশন নির্ভর করে।

বাজারে অনেক এন্টি ফাংগাল ক্রিম পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন নামে।

সে গুলো হলঃ

ইকোনাজল;

মাইকোনাজল;

ফ্লুকোনাজল;

টারবিনাফিন

প্রভৃতি এন্টি ফাংগাল জাতীয় ঔষধ বাজারে আছে।

প্রভাবিত স্থানে নিয়মিত এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় ওষুধ লাগালে 2 থেকে 4 সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের নিরাময় হয়।

খাওয়ার জন্য এন্টি-ফাঙ্গাল ঔষধঃ

যখন দাদের সংক্রমণ দেহের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তখন এন্টি-ফাঙ্গাল ঔষধ খেতে দেওয়া হয় । মাথার তালুতে দাদের সংক্রমণ এন্টি ফাঙ্গাল ক্রিম বা পাউডারে নিরাময় হয় না।

এখানে কিছু এন্টি-ফাঙ্গাল ঔষধ এর নাম দেওয়া হল এই ঔষধ গুলো 1 থেকে 3 মাস খেলে দাদের সংক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। ঔষধ গুলি হলঃ

গ্রিসেয়োফালভিন;

টারবিনাফিন;

ইন্ট্রাকোনাজোল;

ফ্লুকোনাজোন।

মাথার তালুর দাদের চিকিৎসার জন্য ঔষধ খাওয়ার সাথে সাথে সেলেনিয়াম সালফাইড এবং কেটোকোনাজোল মিশ্রিত এন্টি-ফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

ভিনেগার বেশ কিছুদিন ব্যবহার করলে দাদ দূর হবে।

কাঁচা পেঁপে দেহের উপরের মরা চামড়া কে সরিয়ে দেয়। পেঁপে বেটে তা দাদের জায়গায় লাগান।

দাদ কমাতে লবণজলও দারুণ কাজ দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় লবণজল দিনে ৩ বার করে লাগান।

নারকেল তেল যদি দাদের জায়গাতে লাগানো হয়, তাহলে তা দাদকে সারিয়ে ফেলতে অনেকটাই সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের ত্বকের অ্যালার্জিকে সারিয়ে তুলতে নারকেল তেল খুবই কার্যকারী।

হলুদ দাদ থেকে মুক্তির আরেকটি সহজ উপায়। কাঁচা হলুদের পেস্ট বানিয়ে সেইটা দাদের উপরে লাগালে দাদকে সারিয়ে তোলে।

কর্পূর দ্বারা আক্রান্ত স্থান খুব দ্রুত সারিয়ে তোলা সম্ভব । বেশ কয়েকদিন ধরে দাদে কর্পূর লাগানোর পর আর দাদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না।

পুদিনা পাতা বেটে একটি পেস্ট বানিয়ে তার মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে দাদ সংক্রামিত জায়গাগুলোতে ভালো করে লাগাতে হবে।

রসুনের মধ্যে অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণ আছে। তার ফলে রসুন দাদকেও সারিয়ে তোলে। রসুন বেটে বা সরু করে দাদের উপর লাগালে দাদ দূর হয়।

ঘৃতকুমারীর রস দাদের অংশে লাগাতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যে দেখা যাবে যে, দাদ একেবারে সেরে উঠেছে।

সর্বশেষ কথাঃ

আমাদের শরীরে ঘাম এবং ময়েশ্চার বেশি হলে তা আমাদের শরীরের ফাঙ্গাল ইনফেক- শনের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই ঘাম থেকেও দূরে থাকতে হবে। ঘাম থেকে দূরে থাকতে হলে ঘাম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে ফেলতে হবে।

পরিশেষে, এভাবে আপনি যদি দাদের প্রাথমিক অবস্থায় চেষ্টা চালিয়ে যান তাহলে ঘরোয়া উপায়ে দাদের হাত থেকে অতি সহজে মুক্তি পেতে পারেন। এর পরেও যদি দাদ থেকে মুক্তি না মেলে তাহলে চিকিৎ- সকের শরণাপন্ন হবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *