পোলিও রোগ বা পোলিওমাইলাইটিস কি

পোলিও রোগ বা পোলিও মাইলাইটিস, সাধারণতঃ পোলিও নামে পরিচিত, একটি নিউরো-মাস্কুলার ডিজেনারেটিভ অর্থাৎ স্নায়ু পেশীর অপক্ষয় রোগ। এই রোগের কারণ হল পিকর্নাভাইরাইডে পরিবারের একটি ভাইরাস । এই ভাইরাস মেরুদণ্ড এবং ব্রেনস্টেমের অ্যানটেরিয়র হর্ন মোটর নিউ- রনকে আক্রমণ করে; এই মোটর নিউরন আর সেরে ওঠে না এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কঙ্কাল পেশীর গঠন বিকৃত ভাবে হয়।
ইহা খুবই সংক্রামক ভাইরাস, যদিও অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণই বজায় থাকে না । খুব অল্প-সংখ্যক ক্ষেত্রে, ভাইরাস কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রে পৌঁছে যায়। রোগীদের তখন মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত, অস্বস্তি ইত্যাদি হতে পারে। এই রোগ মাঝে মধ্যে পক্ষা ঘাতের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?

রোগীর মৃদু অসুস্থতা, গলায় সংক্রমণ,  জ্বর  অথবা গ্যাস্ট্রো এন্টেরাইটিসের ইতিহাস দেখা দেয়।

মৃদু অসুস্থতা পেশীর আড়ষ্ঠতা এবং প্রচণ্ড ব্যথাতে পরিণত হতে পারে।
অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে, একটা অঙ্গ অন্য অঙ্গের চেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় এবং উপরের অঙ্গগুলির তুলনায় নিচের অঙ্গ গুলি বেশি আক্রান্ত হয় ।
পেশী ফুলে যায় এবং পুরো পুরি ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া পর্যন্ত তৎপরতা কমে যায়।
পক্ষাঘাত সপ্তাহের পর সপ্তাহ থাকে।
রোগী ধিরে ধিরে বেশ কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা থেকে সেরে ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তি শৈশবে লক্ষণ না দেখা দেওয়া পোলিও থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেরে ওঠার কয়েক দশক পর তা আবার দেখা দিতে পারে। এই অবস্থাকে পোস্ট-পোলিও সিন্ড্রোম বলে এবং এই অবস্থা আগ্রাসী হলেও সংক্রামক নয়। এর কোনও প্রতিকার নেই।

এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
পোলিও ভাইরাসের প্যাথোজেন পিকর্নাভাই- রাইডে পরিবারের। এটি অরো-ফিকাল রুট অথবা অরোফ্যারিঞ্জিয়াল রুটের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। কম রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সম্পন্ন এবং খারাপ স্বাস্থ্যজনক ও অপরিছন্ন পরিবেশে বসবাসকারী রোগীদের বিপদের ঝুঁকি বেশি। দূষিত খাবার এবং জল গ্রহণ করা এই প্যাথজেনের জন্য শরীরে প্রবেশের মূলপথ।

ইহা কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসা সংক্রান্ত লক্ষণ ও উপসর্গের উপর নির্ভর করে পোলিও সন্দেহ করা হতে পারে। রোগ নির্ণয় সুনিশ্চিত করার স্বীকৃত পদ্ধতি হল পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন টেস্ট, যার কাজ পোলিও ভাইরাস সনাক্ত করা। মল, গলায় স্রাব এবং সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) হল নমুনা সংগ্রহের উৎস।

প্যারালিটিক পোলিওমাইলাইটিস থেকে সেরে ওঠা সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল প্রভাবিত অঙ্গের পুনর্বাসন, এর মধ্যে রয়েছে – ফিজিওথেরাপি, ওকুপেশনাল থেরাপি এবং রিক্রিয়েশনাল থেরাপি। ব্যথা উপশমের জন্য পেইনকিলার দেওয়া হয়।
পোলিওর মোকাবিলায় সবচেয়ে প্রভাবশালী কৌশল হল টীকাকরণের মাধ্যমে একে আটকানো। পোলিওর প্রতিরোধের জন্য গণ টীকা করণ প্রয়োজনীয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *