যত সমস্যা দাঁতের রোগ থেকে

দাঁত ও মুখের সু স্বাস্থ্য রক্ষা কি কেবল সৌন্দর্যের জন্য?

না, তা নয়। দাঁতের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেহের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সু স্বাস্থ্য।

মুখের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে দেহের গুরুত্ব পূর্ণ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,

নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

যেসব রোগ হতে পারেঃ

আলঝেইমারঃ

মুখের রোগের সঙ্গে আলঝেইমার বা স্মৃতি ভ্রমের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।

মুখের নানা ধরনের জীবাণুর অস্তিত্ব আলঝেইমার রোগীর রক্তেও পাওয়া গেছে।

দীর্ঘ দিন মাড়ির প্রদাহ থাকলে জ্ঞান ও চেতনা কমে যেতে পারে।

শ্বাসকষ্টঃ

মাড়ি আক্রমণ কারী জীবাণু গুলো ফুসফুসের মধ্যেও পাওয়া গেছে,

যা ফুসফুসে ধীরে ধীরে প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং শ্বাসে সমস্যা করে।

হৃদরোগঃ

মাড়িতে দন্ত মল জমে। এ থেকে সৃষ্ট মাড়ির রোগ থেকে যে প্রদাহ ও সংক্রমণ হয়,

তা রক্তের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে যেতে পারে।

হজমের সমস্যাঃ

দাঁতের সমস্যায় হজম শক্তি ব্যাহত হতে পারে।

কেননা, খাদ্য পরিপাকের শুরুটা হয় মুখ থেকেই।

গর্ভ কালীন জটিলতাঃ

গর্ভাবস্থায় যাদের মাড়ির রোগ বা মাড়ির প্রদাহ থাকে,

তাদের গর্ভের সন্তান কম ওজনের অথবা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই জন্ম নিতে পারে এবং নানা জটিলতা হতে পারে।

প্রতিরোধ ও প্রতিকারঃ

দাঁতের সমস্যা থেকে জটিল সব রোগ সৃষ্টি হতে পারে, তাই শৈশব থেকেই দাঁতের যত্নের প্রতি সচেতন হতে হবে।

সঠিক নিয়মে দাঁতের যত্ন নিতে হবে। অবশ্যই রাতে খাবার পরে,

এবং সকালে নাস্তা খাবার পরে ভালো ভাবে ব্রাশ করতে হবে।

বাজার থেকে টুথ পেস্ট কেনার সময় অবশ্যই ব্যালেন্সড ফ্লোরাইড এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ কিনা দেখে নিতে হবে।

বয়স ভেদে বাজারে তিন ধরনের টুথ পেস্ট রয়েছে।

০ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রয়োজন জিরো ফ্লোরাইড,

৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রয়োজন ৫০০ থেকে ৬০০ পিপিএম ফ্লোরাইড সম্পন্ন টুথ পেস্ট,

এবং বড়দের জন্য প্রয়োজন ১০০০ পিপিএম ফ্লোরাইড সম্পন্ন টুথ পেস্ট।

বিশেষ সচেতনতার জন্য ডেন্টাল ফ্লস ও মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়া প্রতি ছয় মাস পর পর অথবা বছরে দু’বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দাঁতে খাবার আটকানোর সমস্যাঃ

দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকালে খাবারের তৃপ্তিটাই নষ্ট হয় না, বিরক্তিও লাগে।

সুস্বাদু খাবার, বিশেষ করে মাংস বা আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁতের ফাঁকে,

কিছু অংশ ঢুকলে অস্বস্তি লাগে, খোঁচা খুঁচি করাও চরম বিব্রত কর।

দাঁতের কন্ট্যাক্ট পয়েন্ট ঠিক থাকলে খাবার ফাঁকে সহসা আটকায় না।

কিন্তু ডেন্টাল ক্যারিজ, দাঁত ও চোয়ালের হাড়ের অসামঞ্জস্য, দাঁত ফাঁকা,

ক্রটিপূর্ণ কৃত্রিম দাঁত, দীর্ঘ সময় প্রতিস্থাপিত ক্যাপ, গঠন গত অস্বাভাবিকতা সহ বিভিন্ন কারণে এ কেন্দ্র নষ্ট হতে পারে।

তখন সহজেই খাবার ভেতরে ঢুকে যায়।
খাবার জমে প্রথম দিকটা তেমন বড় ধরনের কষ্ট দেয় না।

কিন্তু পরে জমাকৃত খাবারের সঙ্গে অসংখ্য জীবাণু, খাদ্য কণা মিশে দাঁতের ফাঁকে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

যেমন – মুখে দুর্গন্ধ, মাড়ি ফুলে যাওয়া, রক্ত পড়া, মাড়ি ও হাড় ক্ষতি গ্রস্ত হওয়া,

দাঁতের শিকড় উন্মুক্ত হয়ে শির শির অনুভূতি, ব্যথা, খাবারের স্বাদ নষ্ট,

দাঁতের ফাঁকে পকেট তৈরি, দাঁতের মজ্জা ক্ষতি গ্রস্ত, দাঁত নড়া, দাঁত পড়ে যাওয়া থেকে নানা জটিলতার তৈরি হয়।

দুই দাঁতের ফাঁকে এটা হয় বলে প্রথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় না।

মজ্জা আক্রান্ত হলে ব্যথা হওয়ার পর বোঝা যায়।

করণীয়ঃ

যাদের দাঁতের ফাঁকে খাবার ঢোকার প্রবণতা আছে, তাদের সাধারণ পদ্ধতিতে টুথব্রাশ করলে সেই খাবার বের হবে না।

অনেকে আবার খাবার বের করতে বেশি জোরে ব্রাশ করে দাঁতের প্রতি রক্ষা অ্যানামেল নষ্ট করে।

বেশির ভাগ মানুষ প্রচলিত কাঠের টুথপিক, ধাতব কাঠি অনেকে আবার সেফটিপিন,

ওষুধের স্ট্রিপ বা হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে খোঁচা খুঁচি করেন।

এ থেকে মাড়ির মধ্যে প্রদাহ তৈরি হয়, ফাঁকা বড় হতে থাকে, দাঁতের ধারক কলা নষ্ট হয়।

দাঁতের ফাঁকের খাবার নিরাপদে বের করার মাধ্যম হচ্ছে ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, ইনহেলার ব্যবহারকারী, কিডনি, লিভার বা হার্টের রোগী,

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথ ওয়াশ বা

কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুল কুচি করতে হবে।

ফাঁকা বড় হয়ে গেলে ফিলিং চিকিৎসা পদ্ধতিতে এটা স্বাভাবিক করা যেতে পারে।

এ ফিলিংকে ক্লাস টু ফিলিং বলা হয়। সাধারণ ফিলিংয়ের চেয়ে একটু সংবেদনশীল।

ভালো চিকিৎসা উপাদান বা অভিজ্ঞ চিকিৎসক না হলে ফিলিংটি নষ্ট হতে পারে সহজেই।

একাধিক দাঁত এলো মেলো থাকলে অর্থডোন্টিক চিকিৎসার প্রয়োজন পড়তে পারে,

যাতে করে দাঁত সুন্দর ও সুসজ্জিত হয়। ক্যাপের স্থানে এমনটা হলে ক্যাপ পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *