হরমোন (টেস্টো-স্টেরন) কি
টেস্টো-স্টেরন মূলতঃ পুরুষের যৌন উত্তেজনা মূলক হরমোন যা পুরুষের শুক্রা-শয় উৎপন্ন হয়। তবে টেস্টো-স্টেরন নারী দেহেও থাকে কিন্তু তা পরিমাণে কম । যৌন উদ্দিপনা ছাড়াও শারীরিক বিভিন্ন কার্যাদি সম্পন্ন করতেও ভূমিকা রাখে টেস্টো-স্টেরন।
টেস্টো-স্টেরণ পরি-পক্ক শুক্রাণুর বিকাশে সহায়তা করে। মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টি-টিউটস অব হেলথের মতে,
“টেস্টো-স্টেরন একটি গুরুত্ব পূর্ণ হরমোন যা যৌনন্নয়ন শারিরীক শক্তি ও দৈহিক কার্য ক্ষমতা এবং লোহিত রক্ত কণিকা নিয়ন্ত্রণ করে। “
মহিলাদের ডিম্বাশয়েও কিছু পরিমাণ টেস্টো-স্টেরণ উৎপন্ন হলেও তার ঘনত্ব ও পরিমাণ পুরুষের টেস্টো-স্টেরণের তুলনায় কম।
মস্তিষ্ক এবং পিটুই-টারি গ্রন্থি টেস্টো-স্টের –
নের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে । দেহে উৎপাদিত টেস্টো- স্টেরন রক্তের মধ্য দিয়ে চলে দেহের বিভিন্ন কার্যাদি সম্পন্ন করে।
টেস্টো-স্টের-নের ঘাটতিঃ
পুরুষত্বের জন্য দায়ী মূল হরমোন হলো টেস্টো-স্টেরন। যা কি না পুরুষের বয়স বাড়ার সাথে কমতে থাকে। শরীরে টেস্টো-স্টের-নের পরিমাণ কমে গেলে অ্যান্ড্রো-পোজ হয়। পুরুষের পুরুষত্বের জন্য দায়ী হরমোনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে না।
ধীরে ধীরে কয়েক বছর ধরে টেস্টো – স্টের-নের মাত্রা কমতে থাকে। আর কমতে কমতে এমন পর্যায়ে যায় যে, পুরুষ তার পুরুষত্ব হারিয়ে ফেলে। গড়ে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে টেস্টো- স্টেরনের মাত্রা ১% করে কমতে থাকে। ২০ বছর বয়সে টেস্টো-স্টের-নের মাত্রা সর্বাধিক থাকে এবং ৭০ বছর বয়সী বয়স্ক পুরুষদের দেহে টেস্টো-স্টের-নের মাত্রা অর্ধেকের থেকেও কমে যায়। টেস্টো-স্টেরন জনিত সমস্যা
মূলতঃ ৩০ বছরের পর থেকেই শুরু হয়।
সে হিসেবে কিশোরদের টেস্টো-স্টেরন জনিত সমস্যা বেশি হয় না। যাদের টেস্টো-স্টের-নের সমস্যা আছে তাদের ৩০ বছরের মধ্যেই বিয়ে করে নেওয়া উচিত।
টেস্টো-স্টেরন জনিত ঘাটতির লক্ষণঃ
টেস্টো-স্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে নানা রকম উপসর্গ দেখা যায়।
এগুলো হলো-
১) আচরণে পরিবর্তন টেস্টো-স্টের-নের মাত্রা কমলে পুরুষের আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়। সব সময় বিমর্ষ ভাব লক্ষণীয়।
২) যৌন-ক্ষমতায় ভাটা পুরুষের যৌন- সঙ্গমের ক্ষমতা এবং শুক্রানু উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায় এর মাত্রা কমে গেলে।
এর মাত্রা স্বাভা-বিকের চেয়ে কমে গেলে যৌন ক্ষমতা কমতে থাকে সেই সাথে যৌন সঙ্গমের আগ্রহও কমে যায়।
৩) টেস্টো-স্টেরনের ঘাটতি হলে লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখার সমস্যা হয় কেননা টেস্টো-স্টেরন হরমোনই লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখার মতো কাজ সম্পাদনা করে।
লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখতে না পারার সমস্যাকে বলা হয় ‘ইরে-ক্টাইল ডিস- ফাংশন’। নাইট্রিক অক্সাইড সর বরাহের মাধ্যমে লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখে টেস্টো-স্টেরন হরমোন। এই সমস্যা দেখা দিলে ধরে নিতে হবে টেস্টো-স্টের-নের ঘাটতি হয়েছে।
৪) অবসাদঃ
টেস্টো-স্টেরন কমে যাওয়ার লক্ষণ হলো অল্প কাজেই ক্লান্তি চলে আসা। সারা দিন কর্ম ব্যস্ত থাকায় অবসাদ আসা স্বাভাবিক
কিন্তু কাজ ছাড়াও যেসব পুরুষের অবসাদ আসে তাদের টেস্টো-স্টের-নের অভাব আছে।
৫) চুল পড়াঃ
টেস্টো-স্টের-নের মাত্রা কমতে থাকলে মাথায় টাকের প্যাটার্নে চুল পড়তে থাকে।
৬) অন্ড কোষ ছোট হওয়াঃ
অন্ডো কোষ স্বাভা-বিকের চেয়ে ছোট মনে হলে সাধারণতঃ তা টেস্টো-স্টের-নের ঘাটতি জনিত কারণে হয়। তবে এমন সমস্যা হলে দ্রুত হরমোন টেস্ট করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৭) বীর্যের পরিমাণ কমে যাওয়া বীর্য হলো
শুক্রাণু বহনকারী তরল শুক্রাণু দুধের ন্যায় কিন্তু ঘনত্বে বেশি। বীর্যের মাধ্যমেই শুক্রাণু ডিম্বানুতে প্রবেশ করে। যদি লক্ষ্য করা যায় যে বীর্যের পরিমাণ ও ঘনত্ব হঠাৎ করেই কমতে শুরু করেছে,তবে তা টেস্টো-স্টের- নের ঘাটতি থেকে হতে পারে। এমন সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৮) রক্ত চাপ কম হওয়াঃ
টেস্টো-স্টের-নের ঘাটতি হলে রক্তের পরিমান কমে গিয়ে রক্ত সল্পতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার ফলে রক্ত চাপ কমে যায়।
টেস্টো-স্টেরন কমে যাওয়ার কারণঃ
অণ্ড কোষের সংক্রমণ ক্যান্সারের জন্য কেমো থেরাপি বিপাকীয় ব্যাধি যেমন – শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গেলে
পিটুই-টারি গ্রন্থির কর্ম হীনতা বা টিউমার
তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা অ্যাল-কোহল অপব্যবহার যকৃতের পচন রোগ এইচ- আইভি/ এইডস দুধ উৎপাদন কারী হরমোন প্রোল্যাক্টিনের উচ্চ মাত্রা স্থূলতা বা চরম ওজন হ্রাস অনিয়ন্ত্রিত টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলিটাস। এছাড়াও বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
এগুলো হলো-
আদর্শ খাবার গ্রহণ না করা,পুরুষ হরমোন টেস্টো-স্টেরন পুরুষত্বের গুণাবলী বহন করে। ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই কমতে থাকে টেস্টো-স্টেরন হরমোন। আদর্শ খাবার নিয়মিত না খেলে টেস্টো-স্টের-নের ঘাটতি হয়। মধু, বাঁধা কপি, রসুন, ডিম, কলা, কাঠ বাদাম, ঝিনুক, পালংশাক, আঙুর, ডালিম, মাংস, টক জাতীয় ফল ইত্যাদি খেলে টেস্টো-স্টের-নের ঘাটতি কমে যাবে।
অধিক পড়া-শুনা, কিংবা অনলাইন আসক্তির জন্য অলস সময় পার করা।
অধিক কাজ কর্ম করলে শরীরে ক্লান্তি আসে কিন্তু অধিক পড়া শুনা কিংবা অনলাইন আসক্তির জন্য সারাদিন শুয়ে-বসে থাকলে অবসাদ ঘিরে ধরে। যা টেস্টো-স্টেরনের ঘাটতির কারণ।
টেস্টো-স্টের-নের সাথে মানসিক অবসাদ ও দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক কী?
টেস্টো-স্টেরন হলো পুরুষের যৌন উত্তেজনা মূলক হরমোন। এই হরমোন একজন পুরুষের জীবনের অতি গুরুত্ব পূর্ণ একটি হরমোন। এই হরমোনের গুণেই মনে কাম বাসনা তৈরী হয়। টেস্টো-স্টের-নের পরিমাণ কমে গেলে মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরে। অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তিতে বুদ (অচেতন) হয়ে যায় শরীর। টেস্টোস্টেরন
এর পরিমান কমে গেলে যৌন উদ্দিপনাও তুলনা মূলক কমে যায়। সহবাসে আপত্তি সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় যা দাম্পত্য জীবনে অশান্তি বয়ে আনে।