পোলিওমাইলাইটিস রোগ কীভাবে ছড়ায়? এই রোগের লক্ষণ সমূহ এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গুলো কী কী

পোলিও বা পোলিওমাইলিটিজ এক ধরনের ভাইরাসবাহিত সংক্রামক রোগ। ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায়। সাধারণতঃ ০৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের পোলিও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পোলিওতে আক্রান্ত ব্যক্তি সাময়িক অথবা স্থায়ীভাবে শারীরিক কোন ক্ষতির সম্মুখীন হন এবং তার কোন অঙ্গ অবশ কিংবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এরা স্নায়ু তন্ত্রের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফলে ব্যক্তির শরীর পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়।

এই রোগে আক্রান্ত শিশুর এক বা একাধিক অঙ্গ অবশ হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থানটি সাধা- রণতঃ পায়ে হয়ে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশী অবশ হলে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশুটি মারাও যেতে পারে। পোলিও টিকা না দেয়া হলে এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

কেন পোলিও হয়?

ভাইরাসের মাধ্যমে পোলিও রোগ ছড়ায়। এই ভাইরাস শুধু মাত্র মানুষের শরীরে বেঁচে থাকতে পারে। পোলিও রোগের ভাইরাস পায়ু পথে অথবা মুখের সাহায্যে শরীরে প্রবেশ করে।

অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা স্থানে এই ভাইরাস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পোলিওতে আক্রান্ত ব্যক্তির মল-মুত্র থেকে পোলিও ভাইরাস ছড়াতে পারে। পোলিও ভাইরাস আছে এমন খাবার, পানি ইত্যাদি গ্রহণের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ।

পোলিও রোগের লক্ষণঃ

প্রথম ০১ থেকে ০২ দিন শিশুর সর্দি, কাশি এবং সামান্য জ্বর হয় এবং তারপর ভালো হয়ে যায়। ০২ থেকে ০৬ দিন শিশুর মাথা ব্যাথা, শিশুর হাত অথবা পা অবশ হয়ে যাওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, জ্বর, শিশু ঠিক মতো দাঁড়াতে চায় না আবার দাঁড় করাতে চাইলে শিশু কান্নাকাটি করে এবং ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে না, শিশুর আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি।

পোলিও টিকাঃ

পোলিও একটি ভাইরাস বাহিত রোগ। তাই খুব দ্রুতই এক জন থেকে অন্য জনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পোলিও রোগের কোন চিকিৎসা না থাকার কারনে সময় মত পোলিও টিকা দেওয়া ছাড়া পোলিও মুক্ত থাকার কিংবা পোলিও থেকে মুক্ত হওয়ার আর কোন উপায় নেই।

দেশ থেকে পোলিও নির্মূল এবং সব শিশুর সুরক্ষার জন্য জাতীয় টিকা দান কর্মসূচিতে পাঁচ বছরের নিচের সকল শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়। আপনার শিশুর বয়স ০৫ বছরের নিচে হলে অবশ্যই সময় মত পোলিও টিকা খাওয়ান।

পোলিও রোগ থেকে শিশুকে রক্ষার জন্য উন্নত প্রতিষেধক ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুর বয়স ০৬ সপ্তাহ হলে প্রতি বার ডিপিটির সঙ্গে দু’ফোঁটা করে পোলিও ভ্যাকসিন এক মাস পর পর তিন ডোজ শিশুকে খাওয়ানো হলে ও ৪র্থ ডোজ শিশুর ০৯ মাস বয়সে হামের টিকার সাথে খাওয়ানো হলে তা শিশুকে পোলিওর হাত থেকে রক্ষা করে। আবার, সুযোগ থাকলে জন্মের পরপর এক ডোজ ও পি ভি অর্থাৎ ওরাল পোলিও নব জাতককে খাওয়ালে ভাল। তবে এটা অবশ্যই ০৪ ডোজের মধ্যে গণ্য হবে না। তাকে ৪র্থ ডোজ অবশ্যই পরবর্তী সময়ে ০৯ মাস বয়সে হামের টিকার সঙ্গে খাওয়াতে হবে।

চিকিৎসাঃ
পোলিও রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে কোন শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। আবার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে মুখের ফেনা পরিষ্কার করা, সাকশান দিয়ে অক্সিজেন দেয়া ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে।

রোগীর রক্ত চাপ, হৃৎস্পন্দন সব সময় নজরে রাখতে হবে। কয়েক সপ্তাহ পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ হয়ে যাওয়া হাত, পা এবং অন্য অঙ্গ সমূহের ব্যায়াম করাতে হবে অথবা ফিজিও থেরাপি দিতে হবে। পোলিও আক্রান্ত শিশুর মল মূত্র ০৬ থেকে ০৮ সপ্তাহ পর্যন্ত যথাযথ ভাবে পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে, কারন- পোলিও জীবাণু কোন ভাবে খাবার কিংবা পানিতে মিশে গেলে তা থেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের বিশেষ করে অন্য কোন শিশুর পোলিও হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পোলিও ভাইরাস (ইংরেজি: Poliovirus), হলো এক ধরনের এন্টারো ভাইরাস ও পিকর্নাভাইরিডি পরিবারের সদস্য। এটা মানব শরীরে পোলিওমায়েলাইটিস রোগ সৃষ্টি করে যা সাধারণতঃ পোলিও নামে পরিচিত পোলিও ভাইরাস একটি RNA জিনোম ও একটি প্রোটিন ক্যাপসিড নিয়ে গঠিত। এর জিনোমটি এক সূত্রক পজিটিভ সেন্স RNA জিনোম যা ৭৫০০ নিউক্লিও- টাইড নিয়ে গঠিত। ভাইরাস কণাটি আইকোসাহেড্রাল ও ৩০ ন্যানোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট্য।

পোলিও রোগ বা পোলিওমাইলাইটিস কি?

পোলিও রোগ বা পোলিওমাইলাইটিস, সাধারণতঃ পোলিও নামে পরিচিত, একটি নিউরোমাস্কুলার ডিজেনারেটিভ অর্থাৎ স্নায়ু পেশীর অপক্ষয় রোগ। এই রোগের কারণ হল পিকর্নাভাইরাইডে পরিবারের একটি ভাইরাস। এই ভাইরাস মেরুদণ্ড এবং ব্রেনস্টেমের অ্যানটেরিয়র হর্ন মোটর নিউ- রনকে আক্রমণ করে; এই মোটর নিউরন আর সেরে ওঠে না এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কঙ্কাল পেশীর গঠন বিকৃত ভাবে হয়।
ইহা খুবই সংক্রামক ভাইরাস, যদিও অধি- কাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণই বজায় থাকে না। খুব অল্প-সংখ্যক ক্ষেত্রে, ভাইরাস কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রে পৌঁছে যায়। রোগীদের তখন মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত, অস্বস্তি ইত্যাদি হতে পারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *