পোলিও কি
ভূমিকা: পোলিও একটি ভাইরাসজনিত রোগ। বাংলাদেশ পোলিও রোগ নির্মূলের জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে জাতীয় টিকা দিবস পালন করে আসছে। এই সফলতার ধারাবাহিকতায় ২৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশকে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি জোরদার ও জাতীয় টিকা দিবস সফলভাবে পালন করার ফলে ২২ নভেম্বর ২০০৬ সালের
পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ সম্পূর্ণ পোলিও মুক্ত আছে । দীর্ঘ কয়েক বছর পূর্বে পোলিও মুক্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেই সফলতার বিশ্ব
ব্যাপী স্বীকৃতি পেল।
পোলিও কি:
পোলিও, পোলিও মাইলেটিস রোগের সচরাচর ব্যবহৃত নাম। ইহা এক ধরণের ভাইরাস জনিত রোগ। পোলিও ভাইরাস আন্ত্রিক ভাইরাস দলেরই অর্ন্তগত। কারণ ইহা শরীরের অন্ত্র পথেই দেহে প্রবেশ করে থাকে।
তিন ধরণের পোলিও ভাইরাস সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়। পোলিও ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির নার্ভস্ সিস্টেমকে ক্ষতি গ্রস্ত করে। যার ফলে এক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
ফলে দেখা যায় যে, পোলিও আক্রান্ত ব্যক্তি সারা জীবনের জন্য চলাচলের ক্ষমতা হারায়। তবে ৫ বছরের শিশুদের জন্য এই রোগ বেশী ক্ষতিকর।
পোলিও রোগের কারণ:
পোলিও রোগের প্রধান কারণ হলো পোলিও ভাইরাস । এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির পোলিও রোগ হয় । দূষিত খাদ্য ও পানির সাথে শরীরে প্রবেশ করার পর এই ভাইরাস রক্ত কোষের মধ্যে দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে রক্তে সংক্রমণ ঘটায়।
পরবর্তীতে ভাইরাস প্রান্তীয় স্নায়ু নিউরনের উদ্দীপনার পথ ধরে ছড়িয়ে পড়ে মাইয়েলিন সমূহকে ধ্বংস করে ফেলে। এই মাইয়েলি- নের মাধ্যমেই স্নেহ পদার্থ সমূহ স্নায়ু তন্ত্র আবৃত করে।
যাতে করে স্নায়ু উদ্দীপনা সমূহ সহজেই সঞ্চালিত হতে পারে। আর এখান থেকেই মাইয়েলাইটিস কথাটি এসেছে। এর ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত যে পরিণতি পরিলক্ষিত হয় সেটিই হলো শিথিল পক্ষা ঘাত বা পোলিও।
পোলিও রোগের লক্ষণ:
পোলিও ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে পোলিও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই রোগের লক্ষণ হলো- বাচ্চাদের সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বর থাকে, মাথা ব্যথা হয়, সারা শরীরে ব্যথা হয়, গলা ব্যথা হতে পারে, বমি বমি ভাব হয়, ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়ে যায়, হাত ও পা অবশ হয়ে যায়, মুখের এক পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিলে ঢোক গিলতে এবং শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাত ও পা চিকন হয়ে যায়।
পোলিও রোগের চিকিৎসা:
ভাইরাস আক্রান্ত পোলিও রোগটি প্রতিকার- যোগ্য নয় ইহা প্রতিরোধযোগ্য । পোলিও রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং সম্পূর্ণ- ভাবে বিশ্রাম নিতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- জন্মের পর থেকে প্রত্যেক শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে।
- গোসল করা, কাপড় ধৌত করা, রান্না করা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি কাজে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।
- স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে।
- টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
- খাওয়ার আগে ও পরে হাত, মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- নোংরা, অপরিষ্কার কাপড় পুকুরে ধোয়া যাবে না।
বাংলাদেশে পোলিও রোগের পূর্ব কথা:
বাংলাদেশে ১৯৭০ এবং ৮০’র দশকে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অনেক। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়। নব্বইয়ের দশকে পোলিও নির্মূলে সফলতা আসতে থাকে।
১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখের মধ্যে পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের মধ্যে পোলিও রোগাক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২ জন। ১৯৮৬ সালের আগে বাংলাদেশে প্রতি বছর কম পক্ষে সাড়ে এগারো হাজার শিশু পোলিও আক্রান্ত হতো।
তবে ১৯৮৮ সালে বৈশ্বিক পোলিও নির্মূল কর্মসূচির আওতায় দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে তা দ্রুত সফলতা লাভ করে। এরই ফল শ্রুতিতে ২০০৬ সালে এসে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে পোলিও মুক্ত হয়।
বাংলাদেশে পোলিও টিকাদান কর্মসূচি:
প্রকৃতপক্ষে লঘুকৃত ভাইরাস সম্বলিত, মুখে খাওয়ানোর টিকা রক্ষণমূলক অনাক্রম্যতা প্রদানে অধিক মাত্রায় কার্যকর হয়েছে।
পোলিও মুক্ত বহু দেশের মত বাংলাদেশও ১৯৯৫ সাল থেকে শিশুকে মুখে খাওয়ানোর পোলিও টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে পোলিও নির্মূলকরণ নীতি গ্রহণ করে।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১ লক্ষ শিশুকে দুই ফোঁটা মুখে খাওয়ানো টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় টিকা দিবস পালিত হয়ে আসছে।