গুগল ফটোস কি ও কিভাবে ব্যবহার করবেন :

হাতের কাছে থাকা স্মার্টফোনে ছবি তুলতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তবে ফোনে ছবি গুছিয়ে রাখা, স্টোরেজ খালি করা, কিংবা ফটো ও ভিডিও ব্যাকাপ নেওয়া বেশ ঝামেলার কাজ মনে হতে পারে।

গুগল এর গুগল ফটোস অ্যাপ ব্যবহার করে উল্লিখিত কাজগুলো বেশ সহজে করা যায়।

এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেনঃ

গুগল ফটোস কি ?

গুগল ফটোসে কিভাবে ফ্রি ছবি ও ভিডিও রাখা যায় ?

গুগল ফটোস এর ফিচারসমুহ ;

গুগল ফটোস কেনো ব্যবহার করবেন ?

গুগল ফটোস ব্যবহার করার নিয়ম।

গুগল ফটোস কি? – What is Google Photos?

গুগল ফটোস হলো গুগলের তৈরি একটি অনলাইনে ছবি জমা রাখা ও শেয়ার করার সার্ভিস।

২০১৫ সালের মে মাসে মুক্তির পর থেকে বেশ জনপ্রিয় গুগলের এই সেবাটি।

সাধারণত, প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে গুগল ফটোস অ্যাপটি প্রি-ইন্সটল করা থাকে।

পূর্বে ছবি বা ভিডিও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আলাদা ডিভাইসের সাথে ফোন কানেক্ট করে এরপর উক্ত ডিভাইসে ছবি বা ভিডিও কপি করা হতো।

তবে প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা পেয়েছি গুগল ফটোস এর মতো ক্লাউড সার্ভিস, যা খুব সহজে অনলাইনে ক্লাউড সার্ভারে ছবি বা ভিডিও জমা রাখতে সাহায্য করে।

গুগল ফটোস মূলত একটি ক্লাউড ফাইল স্টোরেজ ও শেয়ারিং সার্ভিস।

এটি ব্যবহার করে অনলাইনে ছবি আপলোড করে সংরক্ষণ করা যায়।

এছাড়া খুব সহজে ছবি ও ভিডিও অন্যদের সাথে শেয়ার করার মাধ্যম হিসেবেও গুগল ফটোস বেশ জনপ্রিয়।

গুগল ফটোসে কি ফ্রি ছবি ও ভিডিও রাখা যায় ?

পূর্বে Google Photos ব্যবহার করে আনলিমিটেড হাই কোয়ালিটি ছবি ও ভিডিও ক্লাউড স্টোরেজে জমা রাখার সুবিধা ছিলো।

তবে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে গুগল ফটোস এর স্টোরেজের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়।

বর্তমানে গুগল ফটো এর আনলিমিটেড স্টোরেজ ফিচারটি আর নেই।

বরং গুগল একাউন্ট এর সাথে বিনামূল্যে পাওয়া ১৫জিবি গুগল ড্রাইভ ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করা যাবে গুগল ফটোস এর স্টোরেজ হিসেবে।

অর্থাৎ গুগল ড্রাইভ এর ফ্রি ১৫জিবি স্টোরেজে জমা হবে গুগল ফটোস দ্বারা জমা রাখা ছবি বা ভিডিও সমূহ।

স্টোরেজ ব্যবহারের দিক দিয়ে সকল গুগল সেবা এই ফ্রি স্টোরেজ ব্যবহার করে।

গুগল ফটোস এর ফিচারসমুহ :

ছবি ও ভিডিও ব্যাকাপ নেওয়া ছাড়া আরো অসংখ্য চমৎকার ফিচার রয়েছে গুগল ফটোস অ্যাপটিতে।

এসব ফিচার ব্যবহার করে ফোনের স্টোরেজ ম্যানেজমেন্ট যেমন ফোনের স্টোরেজ খালি করা প্রভৃতি বেশ সহজে করা যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক গুগল ফটোস এর ফিচারসমুহ সম্পর্কে।

অটোমেটিক ব্যাকাপ :

গুগল ফটোজ অ্যাপ ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি ও ভিডিও ব্যাকাপ রাখা যায়।

এই ফিচার চালু থাকলে স্ট্যাবল ইন্টারনেট কানেকশন পেলে অটোমেটিক ছবি ও ভিডিও অনলাইন সার্ভারে জমা রাখে অ্যাপটি।

স্মার্ট সার্চ :

গুগল এর শক্তিশালী সার্চ টেকনোলজির দেখা মিলবে গুগল ফটোসে।

যার ফলে যে কোনো কি ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল ফটোস অ্যাপে সার্চ করা যাবে।

যেমনঃ ছবিতে খাবার আছে এমন ছবি খুঁজতে Food লিখে সার্চ করা যাবে।

আবার যে কোনো স্থানে তোলা ছবিসমুহ খুঁজে পাওয়া যাবে উক্ত স্থানের নাম লিখে (জিপিএস ডেটা থাকলে এভাবে ছবি খুঁজে পাওয়া সহজ হবে)।

অ্যাসিস্ট্যান্ট :

গুগল ফটো এর বিভিন্ন ফিচার ব্যবহার বেশ সহজ করে দেয় অ্যাপ এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিচারটি।

এটি ব্যবহার করে খুব সহজে কোলাজ বা এলবাম তৈরি করা যায়।

এছাড়াও ডুপ্লিকেট ফাইল ডিলিট করা কিংবা স্টোরেজ খালি করার ক্ষেত্রেও বেশ কাজে আসে এই ফিচারটি।

গুগল লেন্স :

গুগল লেন্স ফিচারটি ইন-বিল্ট রয়েছে গুগল ফটোস অ্যাপে।

যার ফলে ফোনে থাকা সকল ছবি এনালাইজ করা যাবে গুগল লেন্স এর অসাধারণ সব ফিচার দ্বারা।

লেন্সের ফিচার ব্যবহার করে ছবিতে থাকা অবজেক্ট খোঁজা যায়, টেক্সট কপি-পেস্ট ও ট্রান্সলেট করা যায়।

গুগল ফটোস এলবামস :

এডভান্সড ইমেজ প্রসেসিং ও এনালাইসিস এর মাধ্যমে গুগল ফটোসে ছবি ও ভিডিও পারসোনালাইজড এলবামে সাজানো থাকে।

মানুষ, স্থান, বস্তু, কোলাজ, এনিমেশন বা মুভি সহ একাধিক এলবাম ক্যাটাগরিতে ছবি সমুহ সাজানো থাকে গুগল ফটোসে।

পার্টনার শেয়ারিং :

পার্টনার শেয়ারিং ফিচারটি ব্যবহার করে আপনার গুগল ফটোসে থাকা ছবি আপনার বন্ধু বা পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

এই ফিচারটি ফটোস অ্যাপে প্রবেশ করে Photo Settings অপশনে ট্যাপ করে Partner Sharing এ গিয়ে ব্যবহার করা যাবে।

গুগল ফটোস কেনো ব্যবহার করবেন :

ফ্রিতে ক্লাউডে ছবি ও ভিডিও জমা রাখা যায়।

অটোমেটিক ছবি ও ভিডিও ফোন থেকে ব্যাকাপ নেওয়া যায়।

ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ব্যাকাপ নেওয়ার পর মোবাইলের স্টোরেজ খালি করা যায়।

মুভি, এনিমেশন, কোলাজ ও এলবাম সেভ, শেয়ার ও এমবেড করা যায়।

শক্তিশালী সার্চ ফিচার ব্যবহার করে ছবিতে থাকা বিষয় খোঁজ করা যায়।

খুব সহজে ফটো, ভিডিও ও এলবাম অন্যদের সাথে শেয়ার করা যায়।

মেমোরি ফিচার ব্যবহার করে স্মরণীয় মুহুর্ত স্মরণ করা যায়।

ইন-বিল্ট গুগল লেন্স ফিচার ব্যবহার করে ছবিতে থাকা অবজেক্ট খোঁজা যায়, টেক্সট কপি-পেস্ট ও ট্রান্সলেট করা যায়।

আরো জানুনঃ গুগল লেন্স অ্যাপের দারুণ ৯টি সুবিধা :

গুগল ফটোস ব্যবহার করার নিয়ম :

গুগল ফটোজ এর অসাধারণ ফিচার ও কেনো গুগল ফটোস ব্যবহার করা উচিত – সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা তো পাওয়া গেলো।

এবার ধাপে ধাপে চলুন জানি কিভাবে গুগল ফটোস ব্যবহার করতে হয়।

অ্যাপ ইন্সটল :

অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল ফটোস অ্যাপটি আগে থেকে ইন্সটল করা থাকে।

আপনার ফোনে গুগল ফটোস অ্যাপ না থাকলে প্রথমে প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করুন।

এছাড়া ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করে কম্পিউটার থেকেও গুগল ফটোসে ছবি ও ভিডিও জমা রাখা যাবে।

👉 গুগল ফটোস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড ৷

👉 গুগল ফটোস আইওএস অ্যাপ ডাউনলোড।

👉 গুগল ফটোস ওয়েব ভার্সন।

ব্যাকাপ কোয়ালিটি লেভেল :

অ্যাপ ইন্সটল করার পর ব্যাকাপ নেওয়া ছবিসমুহের কোয়ালিটি সেট করা দরকার।

এ ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন ও গুগল একাউন্ট স্টোরেজ অনুযায়ী সেটিংস নির্বাচন করা একান্ত জরুরি।

ব্যাকাপ কোয়ালিটি লেভেল এর ক্ষেত্রে দুইটি অপশন পাওয়া যায়ঃ

হাই কোয়ালিটিঃ এই ক্ষেত্রে ব্যাকাপ নেওয়া সকল ছবি ১৬ মেগাপিক্সেল ও সকল ভিডিও ১০৮০পি রেজ্যুলিউশনে সেভ করা থাকে

অরিজিনালঃ এই ক্ষেত্রে ফুল সাইজের ও কম্প্রেশন ছাড়া অরিজিনাল ছবি বা ভিডিও সেভ করা থাকে।

অ্যাপ ব্রাউজ করার নিয়ম :

গুগল ফটোস অ্যাপে প্রবেশের পর ফোনে থাকা সকল ছবি তারিখ অনুসারে দেখতে পাবেন।

অ্যাপের নিচের দিকে মেন্যুতে থাকা Search ট্যাবে প্রবেশ করে ফোনে থাকা কাংখিত ছবি সার্চ করে খুঁজে বের করা যাবে।

এছাড়াও Sharing ট্যাব থেকে একাধিক ছবি বা ভিডিও একই সাথে লিংক ব্যবহার করে শেয়ার করা যাবে।

এছাড়াও পূর্বে শেয়ার করা ছবি ও ভিডিও এলবাম এই ট্যাবে প্রদর্শিত হবে।

অন্যদিকে Library ট্যাবে সকল ছবি ও ভিডিও ফোল্ডার আকারে দেখা যাবে।

ফটো ও ভিডিও এডিট :

শুধুমাত্র ছবি বা ভিডিও ব্যাকাপ নেওয়া নয়, গুগল ফটোস ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও এডিট করাও যায়।

ছবি এডিট করার ক্ষেত্রে ক্রপ, ইমেজ এডজাস্টিং, ফিল্টার, মার্কআপ এর মতো অসংখ্য ফিচার ব্যবহার করা যাবে।

ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের ফিচার পাওয়া যাবে।

👉 মোবাইলে ভিডিও এডিট করার ১০ অ্যাপ।

👉 সেরা ১০ এন্ড্রয়েড ফটো এডিটিং অ্যাপ (ফ্রি)।

👉 এন্ড্রয়েড ফোন ব্যাকআপ নেয়ার উপায় :

ফটোস অ্যাপে ভিডিও এডিট ফিচারটিতে রয়েছে ভিডিওতে থাকা নির্দিষ্ট ফ্রেম এক্সপোর্ট করার সুবিধা।

এছাড়াও শেকি ভিডিও স্ট্যাবিলাইজ করার অসাধারণ একটি ফিচার ও রয়েছে গুগল ফটোস অ্যাপে যা বেশ ভালোভাবেই কাজ করে।

শেয়ারিং

গুগল ফটোস অ্যাপের শেয়ারিং ফিচার কিন্তু অন্য সব অ্যাপের মত সাধারণ নয়।

গুগল ফটোস অ্যাপে এক বা একাধিক ছবি বা ভিডিও সিলেক্ট করে Share অপশনে ট্যাপ করলে উক্ত ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা যাবে লিংকের মাধ্যমে

অর্থাৎ এই উপায়ে শুধুমাত্র একটি লিংক ব্যবহার করে গুগল ফটোস দ্বারা এক বা একাধিক ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা যাবে খুব সহজে।

কাংখিত ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতে Share এ ট্যাপ করে এরপর Create Link এ ট্যাপ করার মাধ্যমে একটি লিংক তৈরি হবে।

এটি ব্যবহার করে যে কেউ শেয়ার করা ছবি বা ভিডিও দেখতে পারবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *