কিডনির অসুখ
কিডনি’র প্রধান কাজ রক্ত পরিশোধন করা।
কিডনি’র অসুখে চোখের নিচে, পায়ের গোড়ালিতে পানি জমে।
কারণ ছাড়াই সব সময় ক্লান্তি ভাব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট এবং,
হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজল নাসের বলেছেন,
একদম প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনির অসুখের তেমন কোন লক্ষণ থাকে না।
কারণ শরীর কিডনি’র পরিবর্তনের সাথে শুরুতে মানিয়ে নিতে পারে।
লক্ষণ দেখা দেয় প্রাথমিক পর্যায় পার হলে। তিনি বলেছেন,
বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যা একজন সাধারণ মানুষেরও
খালি চোখে নজরে পড়ে। যা দেখে তিনি সাবধান হতে পারেন।
সব সময় ক্লান্তিঃ
কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সব সময় ক্লান্তি, দুর্বল অনুভব করা,
ওজন কমে যাওয়া এ রকম যদি নিয়মিত হতে থাকে।
কিডনি ঠিক মতো কাজ না করলে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয় সে কারণে এই ক্লান্তি ভাব হয়।
ফোলাভাবঃ
বিশেষ করে চোখের নিচে, পায়ের গোড়ালি ও হাতে ফোলা ভাব।
ডা. নাসের বলেছেন, একটু বেশি ঘুমালে বা অ্যালার্জির কারণে,
ফুলে যাওয়ার সাথে কিডনির অসুখে ফোলার পার্থক্য হচ্ছে এর স্থায়িত্ব।
” যদি চোখের নিচে, পায়ের গোড়ালি ফোলা ভাব স্থায়ী হয়,
এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ হয় তাহলে সেটা কিডনি’র কারণে হতে পারে।”
কিডনি যখন শরীর থেকে পানি বের করতে পারে না,
তখন তা শরীরে জমে গিয়ে এই ফোলা ভাব হয়।
কিডনি’র অসুখ হলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাতঃ
ইহাও কিডনি সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে।
কিডনি যখন শরীর থেকে পানি নিঃসরণ করতে পারে না,
তখন কিছু পানি ফুস ফুসে জমে যায়। সে কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
“দাঁড়ানো অবস্থায় বুক ভরে শ্বাস নেয়া যায় কিন্তু দেখা যায়,
শোয়া অবস্থায় বুক পুরোপুরি প্রসারিত হতে পারে না।
পানি জমলে সমস্যাটা বেশি হয়। ঘুমন্ত অবস্থায়,
শ্বাসে সমস্যা হয় বলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
ত্বকের সমস্যা ও রঙ পরিবর্তনঃ
কিডনির একটি কাজ হল শরীর থেকে সব ধরনের ক্ষতি কর,
রাসায়নিক পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া।
কিডনি সেই কাজটি ঠিক মতো করতে না পারলে ত্বকে এর চাপ পড়ে।
যেমন শরীরের ইউরিয়া বের হতে না পেরে ত্বকের নিচে জমা হতে থাকে।
তখন চুলকানি হয়, ত্বকের রঙ পরিবর্তন ও খস খসে হয়ে যেতে পারে, ফুসকুড়ি হতে পারে।
ডা. নাসের বলেছেন, “প্রাথমিক ভাবে অনেকে ইহাকে চর্মরোগ মনে করতে পারেন।
সেটি মনে করেও যদি একজন চিকিৎসকের কাছে যান তাহলেও একটা ক্লু পাওয়া যেতে পারে।”
ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধের ৫টি উপায়ঃ
উচ্চ রক্তচাপঃ
নীরব এই ঘাতক থেকে বাঁচতে আপনি যা করতে পারেন
কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে ত্বকে এর ছাপ পড়ে।
প্রস্রাবে পরিবর্তনঃ
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া অথবা প্রস্রাব কমে যাওয়া,
দুটোই কিডনির সমস্যার লক্ষণ। শরীর থেকে,
পানি বের করা ছাড়াও পানি শুষে নেয়ার কাজও করে কিডনি।
সেটি করতে না পারলে বেশি প্রস্রাব হয়ে থাকে।
প্রস্রাবের রঙ লালচে হলে, প্রস্রাবে ফেনা ভাব হলে,
কিডনিতে পাথর, ক্যান্সার, টিউমারের কারণে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।
কিডনি’র সমস্যা হলে শরীর থেকে প্রোটিন বেশি বের হয়ে যায় তাই ফেনা ভাব হয়।
মাংস পেশিতে টান লাগাঃ
কিডনি’র সমস্যার কারণে ইলেক্ট্রো-লাইট, ক্যালসিয়াম ও,
ফস ফরাসের ভার-সাম্য-হীনতা হয়ে থাকে। এতে,
মাংস পেশিতে টান লাগা ও খিচুনির সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া খাবারে দীর্ঘদিন অরুচি ও বমি ভাব এ গুলোই কিডনি অসুখের প্রধান লক্ষণ।
এর একটি লক্ষণ থাকলেও চিকিৎসকের শরণা-পন্ন হওয়া উচিৎ।
তবে ইহা ধরে নেবার প্রয়োজন নেই যে কিডনি’র সমস্যাই হয়েছে।
কিন্তু সাবধান হতে ক্ষতি নেই”, বলছিলেন ডা. নাসের।
তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন এসব লক্ষণ চোখে পড়লে,
শুরুতে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিৎ।
সাবধান হতে যা করা যেতে পারে
কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে কিডনির সমস্যা থেকে দুরে থাকা যায়।
এ নিয়ে ডা. ফজল নাসের কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেনঃ
দুটি অসুখকে কিডনির বড় শত্রু বলা হয়।
একটি হল -উচ্চ রক্তচাপ
অন্যটি – ডায়াবেটিস, এই দুটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী।
বেশি দিন ধরে ইউরিন ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর ও,
প্রস্টেটের সমস্যা কিডনির ক্ষতি করে। তাই এই অসুখ গুলো পুষে রাখবেন না।
ব্যথা নাশক ঔষধকে বলা হয় কিডনির জন্য বিষ।
ইচ্ছে মত মুড়ি মুড়কির মতো ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কিছু অ্যান্টি-বায়ো-টিকস চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিৎ নয়।
শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ভিটামিন সি কিডনির ক্ষতি করে।
যেসব খাবার এড়িয়ে যাবেনঃ
যেসব খাবারে অতিরিক্ত ভিটামিন সি রয়েছে,
সেগুলা না খাওয়া অথবা পরিমিত খাওয়া। “খুব বেশি কামরাঙ্গা খেলে,
যেমন এক গ্লাস কামরাঙ্গার জ্যুস খেলে এমনকি,
একটি সুস্থ কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। কিছু দেশে কাম রাঙ্গা চাষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ”,
অনেক ভিটামিন সি রয়েছে বলে অতিরিক্ত আমলকী খাওয়ারও ক্ষতি রয়েছে।
তবে ফল হিসেবে ছোট ও অনেকের কাছে এটি,
বিস্বাদ মনে হয় বলে এটি খাওয়ার প্রবণতা কম।
এ ছাড়া নিয়মিত শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ভিটামিন সি খাওয়া,
বিশেষ করে অতিরিক্ত ‘সাপ্লিমেন্ট’ কিডনি’র ক্ষতি করে।
ডা. নাসের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, “এমনও দেখেছি যে,
বাচ্চাকে চুষে খাওয়ার ভিটামিন সি কিনে দেয় নিয়মিত।
সারাক্ষণ খেতে থাকে। এ রকম অতিরিক্ত ভিটামিন সি খেলে কিডনি’র ক্ষতি হয়।
দিনে সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি,
অর্থাৎ একটা কমলা, এই পর্যন্তই ঠিক আছে।”
এছাড়া লবণাক্ত খাবার, ধূমপান, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।