বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু হয়

সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষ গড়ে তুলনামূলক বেশি সময় বেঁচে থাকছে। ১৯৫০ সালে, বিশ্ব ব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৬বছর। ২০১৫ সালের মধ্যে এটি বেড়ে ৭১ বছরে দাঁড়ায়।

কিছু দেশের পক্ষে এই অগ্রগতি এতোটা সহজ ছিল না। নানা ধরণের রোগ, মহামারী এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকের এই গড় আয়ুর ওপরে প্রভাব ফেলেছে।

সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কার- ণেও অকালে মৃত্যু দেখা দিতে পারে। বিশ্বে যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ০.৫% এর পেছনে এসব কারণ দায়ী।

কিন্তু সারা বিশ্বে এখনও অল্প বয়সেই অনেকে মৃত্যুবরণ করছে। তাও আবার এমন সব কারণে যেগুলো চাইলেই প্রতি- রোধ করা যেতো।

মানুষ যখন মারা যায় তখন সে আসলেই কীভাবে মারা যায় সেই গল্পটা সময়ের সাথে সাথে বদলাতে থাকে।

বিশ্বে মৃত্যুর কারণঃ

২০১৭ সালে বিশ্বের প্রায় পাঁচ কোটি ৬০লাখ মানুষ মারা যান। ১৯৯০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা এক কোটিরও বেশি।

কারণ বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষ গড়ে বেশি সময় ধরে বাঁচছে। যারা মারা গেছেন তাদের ৭০% এর ও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক অথচ জটিল নানা রোগ। এসব রোগ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে না ছড়ালেও ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে।

মানুষের এই মৃত্যুর এখন সব চেয়ে বড় একটি কারণ হল হৃদ যন্ত্র-জনিত রোগ বা কার্ডিও-ভাসকু-লার ডিজিজ।

বর্তমানে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর পেছনে হার্টের সমস্যা দায়ী।জাপানের মানুষের গড় আয়ু সব চেয়ে বেশি।

হার্টের সমস্যা ক্যান্সারের ঝুঁকিও দুই গুন বাড়িয়ে দেয়, যেটা বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

বর্তমানে প্রতি ছয় জনের মধ্যে এক জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঝুঁকিপূর্ণ রোগের তালিকায় অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগও রয়েছে।

বিশেষ করে ডায়াবেটিস, শ্বাস যন্ত্রের কয়ে কটি রোগ এবং ডিমেনশিয়া অর্থাৎ স্মৃতি ভ্রংশ রোগ এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

প্রতিরোধ করা যেতো এমন কারণে মৃত্যু অনেক বেশি হতাশার কারণ হল , এখনও অনেক মানুষের রোগ প্রতিরোধ করা যেতো এমন রোগেও মারা যাচ্ছে।

২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ডায়রিয়া জনিত রোগে মারা গেছে। ডায়রিয়া হল বিশ্বে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে একটি। কিছু দেশে, ডায়রি- য়াই মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

নব জাতকের নানা ধরণের অসুখের কারণে তাদের জন্মের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাওয়ার হার ২০১৭ সালে ১৮ লাখে দাঁড়ি- য়েছে। এই মৃত্যুর হার আবার একেক দেশে একেক রকম। জাপানে, ১০০০ শিশুর মধ্যে এক জনেরও কম তাদের জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায়।

অথচ বিশ্বের অনেক দারিদ্র্য -পীড়িত দেশে প্রতি ২০০ নব জাতকের মধ্যে এক জন ২৮ দিন না পেরুতেই মারা যাচ্ছে।এভাবে আরও নানা প্রতিরোধ যোগ্য রোগে মানুষের মৃত্যু তালিকা বাড়ছেই।

অন্য দিকে ধনী দেশ গুলোর পাশা পাশি দরিদ্র দেশ গুলোতে ও মানুষের মৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। ২০১৭ সালে বিশ্ব ব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে গবেষণায় দাবি করা হয় । সাম্প্রতিক দশক গুলোতে উচ্চ আয়ের অনেক দেশে সড়কে মৃত্যুর হার উল্লেখ যোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাপী সড়কে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাটি এখনও প্রায় একই রকম।

এদিকে, বিশ্ব ব্যাপী অনেক মানুষ আত্মহত্যা ও হত্যার শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে।যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যার হার ১৬গুণ বেড়েছে। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা।

মৃত্যুর কিছু ধরণঃ

মানুষ কি কারণে মারা যায় সেটা একটি দেশের সাথে সাথে সময়ের পরিক্রমায় বদলে যায় । আগে সংক্রামক রোগে বহু মানুষ মারা যেত, যেটা এখন তুলনামূলক কম।

১৯৯০ সালে , তিনটি মৃত্যুর মধ্যে একটি হতো ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগের কারণে। কিন্তু ২০১৭ সাল নাগাদ পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটি এই সংক্রামক রোগের কারণে হয় ।
বিশেষ করে শিশুরা সংক্রামক রোগে সব চেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক কালে অর্থাৎ ১৯ শতকে পৃথিবীর প্রতি তিন জন শিশুর মধ্যে এক জন নিজে- দের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মারা যায় বলে জানা গেছে।

মৃত্যুহার কমেছেঃ

বর্তমানে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য সেবা এবং পরি- চ্ছন্ন পানির ব্যবহার এবং টিকার কারণে শিশু মৃত্যুহার উল্লেখ যোগ্য ভাবে কমে গেছে। ধনী দেশ গুলোতে শিশু মৃত্যুর ঘটনা এখন বিরল , সেই সঙ্গে দরিদ্র দেশগুলো- তেও শিশু মৃত্যুর হার যুক্ত রাজ্য বা সুই – ডেনের মতোই।

বিশ্ব ব্যাপী শিশু মৃত্যুর হার এভাবে কমে আসা আধুনিক স্বাস্থ্য সেবার সর্বাধিক সাফল্য-গাঁথা। সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর মারা যাওয়া শিশুর হার সাম্প্রতিক দশকে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

একই চিত্র বয়স্ক মানুষের বেলায়ও। তাদের অ সংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার ও নেমে এসেছে । অনেক দেশের জন্য এটা এখন বলতে গেলে চিন্তার কারণ।

কেননা বয়স্কদের দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থতার মধ্যেও আয়ুষ্কাল বাড়ায় সেটা আত্মীয় স্বজন ও স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উপর এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছে।

তবে যে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এই চিত্র পুরো পুরি উল্টে দিতে পারে । ১৯৮০ এর দশকে এইচ আই ভি / এইডস সংকট হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এই মহামারী গোটা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকার দেশ গুলোয় মানুষের গড় আয়ুষ্কালের ওপর ইহার প্রভাব ছিল উল্লেখ করার মতো।বেঁচে থাকার প্রবণ তায় কয়েক দশক ধরে উন্নতির পথে থাক- লেও পরে তা উল্লেখ যোগ্য-ভাবে হ্রাস পায়।

এন্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি, চিকিৎসা এবং এই রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে শিক্ষা বিস্তার হওয়ায় বিশ্ব ব্যাপী এইডসের কারণে মৃত্যু মাত্র এক দশকের মধ্যেই হ্রাস পেয়েছে – ২০ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখে।

তখন থেকেই দেশ গুলো তাদের আয়ুষ্কালের চিত্র পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে । অগ্রগতি হয় ধনী দেশগুলোতেও।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *