ঢোক গিলতে অসুবিধা হলে
রিফ্লাক্স গ্রিক শব্দ, যার মানে উল্টা প্রবাহ। ভালো-ভাবে বলতে গেলে,
পাকস্থলীর ভেতরের পদার্থ গুলো নিচের দিকে না গিয়ে ওপরের দিকে,
বা উল্টো দিকে গলায় উঠে আসে। যখন আমরা খাবার খাই খাবার পাকস্থলীতে যায়,
এবং হজম শুরু হয়ে যায়, এ খাবার যখন হজম না হয়ে,
ওপরের দিকে গলাতে উঠে আসে, তখন তাকে রিফ্লাক্স বলে।
স্বর যন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্সঃ
এর মানে হচ্ছে পাকস্থলীর খাবার ও তার এসিড স্বর যন্ত্র বা গলার মধ্যে উঠে আসে।
ইহা দিনে বা রাতে যে কোনো সময় হতে পারে।
যাদের এ সমস্যা থাকে তাদের খাবার না খেলেও এ রকম হতে পারে।
যাদের রিফ্লাক্স থাকে তাদের সবার বুক জ্বালা বা,
হজমের অসুবিধা নাও থাকতে পারে। যাদের স্বর যন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্স থাকে,
তাদের অনেকেরই বুক জ্বালা থাকে না। এ জন্যই স্বর যন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্সকে,
সুপ্ত রিফ্লাক্স বলা হয়। ফলে এ রোগ ধরতে অনেক সময় অসুবিধা হতে পারে।
রিফ্লাক্সের উপসর্গঃ
কেউ যদি নিম্নলিখিত সমস্যায় আক্রান্ত হন-
০১) গলার স্বর বসে যাওয়া।
০২) গলা বার বার পরিষ্কার করা।
০৩) গলার শ্লেষা বৃদ্ধি পাওয়া।
০৪) খাদ্য, পানি বা বড়ি গিলতে অসুবিধা হওয়া।
০৫) খাবার পর বা শোয়ার পর কাশি হওয়া।
০৬ শ্বাস নিতে অসুবিধা বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া।
০৭) কষ্ট-কর বা বিরক্তি-কর কাশি।
০৮) গলার ভেতর কিছু আটকে থাকা বা গলার ভেতর টিউমারের মতো কিছু বোধ করা।
০৯) বুক জ্বলা, বুক ব্যথা, হজমের অসুবিধা বা ঢেঁকুরের সঙ্গে টক পানি উঠে আসে।
১০) গলায় টিউমারের মতো বাধ করা।
১১) ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া।
যাদের স্বর যন্ত্র ও গলায় রিফ্লাক্স থাকে তাদের বুক জ্বলা থাকে না-
কারণ কী সবার বুকজ্বলা থাকে না, ইহা বলা ভুল।
যারা স্বর যন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্সে ভোগে তাদের মধ্যে,
অর্ধেকের বুক জ্বলা থাকে না এটা সত্যি। এর কারণ হচ্ছে,
যেই পদার্থ গুলোর রিফ্লাক্স হয় তারা খাদ্য নালিতে বেশিক্ষণ থাকে না।
আরেক কারণ পাকস্থলীর এসিডও বেশিক্ষণ,
খাদ্য নালিতে প্রদাহ করতে পারে না। এর ফলে বুক জ্বলা উপসর্গ হয় না।
অল্প পরিমাণেও যদি পাকস্থলীর পদার্থ গলায় চলে আসে,
তখন অন্য সমস্যা হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে,
খাদ্য নালির চেয়ে স্বর যন্ত্র ও গলা এসিডের প্রতি বেশি স্পর্শ কাতর (সংবেদন শীল)।
স্বর যন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্স শ্বাস নালিতে এমনকি ফুস ফুসেও অসুবিধা করতে পারে।
গলায় টিউমারের মতো মনে হওয়া
গলার মধ্যে চাকার মতো বোধ করা।
ইহা সাধারণ সমস্যা যার সঙ্গে স্বর যন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্সের যোগাযোগ আছে।
একে গ্লোবাস ফেরিনজিস বলে। কেউ বলে গলায় কিছু চেপে আছে,
অথবা গলায় শ্লেষা এমন ভাবে জমে আছে যে তারা এটা কফের সাহায্যে,
পরিষ্কার করতে পারছেন না। অনেকে ভাবেন যে তাদের গলায় ক্যান্সার হয়েছে।
ইহা সব সময় ক্যান্সারের উপসর্গ নয়। এ দুশ্চিন্তা,
রোগীর একই অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে । গ্লোবাস মানে হচ্ছে,
গলায় একটা অস্বস্তি বোধ যার জন্য টিউমার বা ক্যান্সার দায়ী নয়।
কী ভাবে বুঝবেন স্বর যন্ত্র ও গলায় রিফ্লাক্স হচ্ছে,
অনেক দিন ধরে গলার স্বর বসে যাওয়া, বার বার,
গলা পরিষ্কার করা এবং কাশি হওয়া, তার সঙ্গে গলার ভেতর টিউমারের মতো,
বোধ করা অথবা ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া,
এ গুলোই হচ্ছে স্বর যন্ত্র বা গলার রিফ্লাক্সের উপসর্গ।
কারও কারও বুক জ্বলা থাকতে পারে। কারও গলার স্বর মাঝে মাঝে বসে যায়,
আবার হঠাৎ করে ঠিক হয়ে যায়। কারও কারও বেশি শ্লেষা হওয়া,
এসব উপসর্গ থাকতে পারে। কেউ কেউ শুয়ে থাকলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো,
মনে হতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ইহা মারাত্মক কিছু নয়।
কারও যদি এসব উপসর্গ থাকে এবং কেউ যদি ধূম পায়ী হয়ে থাকেন তবে,
সমস্যা গুলোর কারণ জানার জন্য নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞ আপনার গলা ও স্বর যন্ত্র ভালো ভাবে দেখবেন।
অনেক সময় গলার এন্ডোস-কোপি করা লাগতে পারে।
ইহা পেটের এন্ডোস-কোপি থেকে ভিন্ন। যেহেতু ইহা অনেক সরু,
এবং নাক অবশ করে ঢুকানো হয় সেহেতু এটা করার সময় ব্যথা,
বা অস্বস্তি অনুভূত হয় না বললেই চলে।
এ রোগের (এলপিআর) চিকিৎসা কি সারা জীবন নিতে হবে?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগের চিকিৎসা কিছু দিন নিতে হয়,
ইহা হতে পারে মাস অথবা বছর। চিকিৎসা আবার নিতে হয় যখন এ রোগ আবার হয়।
কারও কারও আবার সব সময় চিকিৎসা নিতে হয়।
স্বর যন্ত্র ও গলার রিফ্লাক্স (এলপিআর) কোনো মারাত্মক জটিলতা করে না,
যদি কেউ চিকিৎসা না নিয়ে থাকেন তাহলে এ রোগ মারাত্মক ও বিপজ্জনক হতে পারে।
যাদের ঔষধে কাজ হয় না তাদের ক্ষেত্রে ‘এনিটি রিফ্লাক্স’ সার্জারি করতে হয়,
এবং যাদের সার্জারি হয় তারা এলপিআর থেকে অনেক বছর সুস্থ থাকেন।
যেভাবে এলপিআর চিকিৎসা করা হয়
অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে, যেমন-
০১) খাদ্যাভ্যাস বদলানো যাতে রিফ্লাক্স কম হয়।
০২) ঔষধ ব্যবহার করা যাতে পাকস্থলীর এসিড কম বের হয়।
০৩) সার্জারি করা যাতে রিফ্লাক্স না হয়।
খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাত্রা বদলালে,
এবং সঙ্গে কিছু ঔষধ ব্যবহার করলে এলপিআরের চিকিৎসা করা সহজ,
খুব কম ক্ষেত্রে সার্জারির দরকার হয়।
রিফ্লাক্স ও এলপিআর কমানোর জন্য উপদেশঃ
০১) ধূমপান বর্জন করা।
০২) খুব টাইট জামা কাপড় না পরা, বিশেষ করে কোমরের দিকে।
০৩) খাবার পর পরই না শোয়া।
০৪) স্বল্প চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। মাখন, গরু ও খাসির মাংস না খাওয়া।
ভাজা-পোড়া কম খাওয়া। পনির, চকলেট ও পেসট্রি বর্জন করা। লেবু জাতীয় পানীয় না পান করা।
০৫) মোটা হলে ওজন কমিয়ে ফেলা।
০৬) উত্তেজক পানীয় (মদ) না খাওয়া।